আরব আমিরাতকে জনশক্তির বাজার খুলতে অনুরোধ

>
  • বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার সংযুক্ত আরব।
  • পাঁচ বছর ধরে বন্ধ আছে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি।
  • ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের জেইসি বৈঠকে অনুরোধ জানানো হয়।

পররাষ্ট্র এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা গত সোমবার প্রথম আলোকে জানান, ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি আবুধাবিতে দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকে এ অনুরোধ জানানো হয়। অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার বিন মোহাম্মদ গারগাশ আলোচনায় দুই দেশের নেতৃত্ব দেন।

বাংলাদেশের শ্রমিকদের অপরাধপ্রবণতার কারণ দেখিয়ে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ আছে চিরাচরিতভাবে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহৎ বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে ধারণা করা হয়, ২০২০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোর ভোটাভুটিতে দেশটিকে ভোট না দেওয়ায় বাংলাদেশের ওপর অসন্তুষ্ট হয় মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটি।

২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর দেশটিতে অন্তত কয়েক লাখ বাংলাদেশি কাজের জন্য যেতেন। ২০১৩ সাল থেকে এ সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন মাত্র ৪ হাজার ১৩৫ জন। তাঁদের মধ্যে নারী ৩ হাজার ২৭২ জন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাবশালী দৈনিক গালফ নিউজ সেখানকার সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিদেশি শ্রমিকদের নতুন করে কাজ পেতে হলে ভিসার আবেদনের সময় নিরাপত্তা যাচাই বাছাইপ্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। অর্থাৎ কেউ সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজের জন্য ভিসা নিতে চাইলে তাঁকে গত পাঁচ বছরে নিজের দেশ অথবা যেখানে কাজ করেছেন সে দেশের কর্মক্ষেত্র কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারিত্রিক প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।

নতুন এই প্রক্রিয়া ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাজার খোলার বিষয়টি সামনে আনা হয়। বাজার খুলতে দেরি হলে বাংলাদেশের লোকজন যাতে আকামা পরিবর্তন করতে পারেন, সে জন্য আকামা পরিবর্তনকে বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের নাগরিকেরা আকামা পরিবর্তনের সুযোগ না পাওয়ায় দেশে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ সুযোগটি পেলে তাঁদের সেখানে অবস্থানের সুযোগ নিশ্চিত হতো। তা ছাড়া গত কয়েক বছরে দেশভিত্তিক বিদেশি শ্রমিকের আনুপাতিক হারে বাংলাদেশের শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে। বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনার আশ্বাস দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের অপরাধপ্রবণতার কথা বলে দেশটি বাজার বন্ধ করে দেয়। ওই প্রবণতা গত কয়েক বছরে কমলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। তার ওপর নতুন করে আগ্রহী শ্রমিকদের নিরাপত্তার অতীত পরিসংখ্যান যাচাইয়ে এটা স্পষ্ট, দেশটি যখন প্রয়োজন মনে করবে, তখনই বাজার খুলবে।

২০১৩ ও ২০১৪ সালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে ৭০ শতাংশ বাংলাদেশের। আর আটক বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকের হার ৬০ শতাংশ।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা সম্পর্কে জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে পর্যটক শ্রেণিতে বাংলাদেশের ৭০ হাজার নাগরিকের জন্য ভিসা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।