রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকায় হাইকোর্টের অসন্তোষ

জঙ্গি তৎপরতা ও অর্থায়নের ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলায় আসামির জামিনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন উচ্চ আদালত। রাজধানীর রূপনগর থানার একটি মামলায় এক আসামির জামিন আবেদনের শুনানিকালে বুধবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

জামিন আবেদনের শুনানিকালে অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলমকে আদালত বলেন, জঙ্গি তৎপরতা ও অর্থায়নের মামলায় আসামির জামিনের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ না নিলে আসামি তো বেরিয়ে যাবে। গত সেপ্টেম্বরে মামলাটি হয়েছে। এখনো তদন্ত চলছে। তদন্তের ধাপ শেষ হওয়ার আগেই অন্যতম আসামিরা জামিন পেয়ে বেরিয়ে গেছে। আপনার কার্যালয়ে অনেক আইন কর্মকর্তা আছেন। এ ক্ষেত্রে আপনার অফিসের দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেই।

অসহায়ত্ব প্রকাশ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমাদের গাফিলতির জন্য বেরিয়ে গেছে। ... ক্ষমতা থাকলে ৭০ শতাংশকে স্যাক (চাকরিচ্যুত) করে দিতাম। আমার কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। বাদ দেওয়ারও ক্ষমতা নেই।’

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে রূপনগর থানায় জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে ওই মামলাটি হয়। এই মামলায় কারাগারে থাকা আসামি ফয়সাল ওরফে তুহিন হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান, যা বুধবার শুনানির জন্য ছিল।

আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মঞ্জুর এলাহী পরাগ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ।

শুনানিকালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে আদালত বলেন, জঙ্গিরা অর্থ ও প্রযুক্তি সামগ্রীসহ হাতেনাতে ধরা পড়েছে। অন্যতম কয়েকজন আসামির জামিন হয়ে গেছে। আপনার কার্যালয়ে অনেক আইন কর্মকর্তা আছেন। এ ক্ষেত্রে পরবর্তীতে আপনার অফিসের দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেই। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটি আমাদের দোষ। এই দোষের কারণে আসামি ছাড়া পেতে পারে না। আমাদের গাফিলতির জন্য বেরিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

আদালত বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, এই মামলায় প্রথম চার আসামি জামিনে বেরিয়ে গেছে। আমরা কি করব, আইনের কাছে আমাদের হাত-পা বাধা।’ অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জঙ্গি অর্থায়ন ও তৎপরতা নিয়ে করা এসব মামলা নমনীয় দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ নেই। জামিন দেওয়া আদালতের এখতিয়ার।’

আদালত বলেন, জামিনের পর পদক্ষেপ না নিলে জামিন পেয়ে আসামি তো বেরিয়ে যাবে। গত সেপ্টেম্বরে মামলাটি হয়েছে। এখনো তদন্ত চলছে। তদন্তের ধাপ শেষ হওয়ার আগেই আসামিরা জামিন পেয়ে বেরিয়ে গেছে।

অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া সংবর্ধনায় আপনি ভালো ভালো কথা বলেছেন। বেঞ্চের দিকে তির ছুড়েছেন। খালি বেঞ্চের দিকে ইঙ্গিত করলে চলবে? নিজের অফিসের দিকে তাকাবেন না। শুদ্ধি অভিযান তো নিজের ঘর থেকে শুরু করতে হয়।’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে সত্তর শতাংশকে সেক (চাকরিচ্যূত) করে দিতাম। আমার কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা নেই। বাদ দেওয়ারও ক্ষমতা নেই।’
শুনানি নিয়ে আদালত আবেদনকারীর (ফয়সাল) জামিন প্রশ্নে রুল দেন।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই মামলায় ১১ আসামির মধ্যে প্রথম চার আসামি হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চ থেকে জামিন পান। পরে তারা বেরিয়ে গেছেন। মামলায় ফয়সাল আসামির তালিকায় ১১ নম্বরে। মূল আসামিরা জামিন পাওয়ায় সেও জামিন পেতে পারেন—এমন যুক্তি দিয়ে জামিন আবেদনটি করা হয়।

আইনজীবী সূত্র বলেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে রূপনগর থানায় ওই মামলাটি করা হয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আইবাক লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাইফুল হক সুজন এর আগে সিরিয়ায় যুদ্ধে নিহত হন। তখন আইব্যাকের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ ওঠে। এরপর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর সূত্র ধরে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগে ১১ জনকে গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ফয়সাল জামিন আবেদন করেন, যা আজ শুনানির জন্য তালিকায় ছিল।