আ. লীগের সাংসদের বিরুদ্ধে দলের নেতাদের অভিযোগ

সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী
সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী
>
  • মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ার আহ্বান। 
  • অভিযোগ অস্বীকার সাংসদের। 
  • সাংসদের পাল্টা অভিযোগ।

সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা সংবাদ সম্মেলন করে আমার বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার করেছে, তারা সবাই দুর্নীতিবাজ। তারা আমার কাছে নানা রকম ভাগ-বাঁটোয়ারা চেয়েছিল। কিন্তু আমি দিইনি। এ কারণে তারা ক্ষুব্ধ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, এরা যেসব অভিযোগ করেছে, তার প্রমাণ দিতে পারবে না। যদি পারে, তাহলে আমি নিজ থেকেই সরে যাব।’

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রইছ আলী স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুগ্ম সম্পাদক সাহেদ হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘‌আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এখানে উপস্থিত প্রায় প্রত্যেকেই দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেকেরই স্বাধীনতার আগে থেকে এই দলের প্রতি শ্রম ও ত্যাগ রয়েছে। কিন্তু দলে উড়ে এসে জুড়ে বসা একটি চক্র আমাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ত্যাগ ও অবদানকে অস্বীকার করছে। তারা দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়ে স্বার্থান্বেষীদের নিজের চারপাশে রাখছে। আমরা সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলছি। অত্যন্ত বেয়াদব, প্রতিহিংসাপরায়ণ, আভিজাত্যের অহমিকায় অন্ধ, পরশ্রীকাতর সামাদের দলীয় আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’

সামাদ চৌধুরীকে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি অভিহিত করে সাহেদ হোসেন আরও বলেন, ব্যক্তিস্বার্থে উপজেলা আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে তছনছ করে দিচ্ছেন সামাদ। তিনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরকে লক্ষ্য করে চণ্ডীপুল এলাকায় আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তাঁর ইন্ধনে সংঘর্ষ হয়। ওই সভায় তাঁকে প্রধান অতিথি না করায় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডারদের দলের নেতা-কর্মীদের ওপর লেলিয়ে দেন। ১৬ মামলার পলাতক আসামি শিবির ক্যাডার সোহেল রানা, ছাত্রদলের চিহ্নিত ক্যাডার আব্বাস, মঞ্জু, কুটন, বাবুল, রুহুলসহ বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

সাহেদ হোসেন আরও বলেন, চার বছর ধরে দক্ষিণ সুরমায় উন্নয়ন হচ্ছে না। উপজেলার রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ। বিদ্যালয়গুলোতে আসবাব নেই। পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। দক্ষিণ সুরমার প্রতি সাংসদের বিমাতাসুলভ আচরণে এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সাংসদকে নানা দুষ্কর্মের হোতা উল্লেখ করে সাহেদ হোসেন বলেন, ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। প্রতিটি ইউনিয়নে তৃণমূল নেতাদের বাছাই করার ফলে সাংসদের নিজের লোকেরা প্রার্থী হতে পারেননি। এতে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে দলীয় প্রতীকের বিরোধিতা করে অন্য দলের প্রার্থীদের সমর্থন দেন তিনি। তাঁর বিরোধিতার কারণে দক্ষিণ সুরমায় সাতটি ইউনিয়নের পাঁচটিতেই নৌকার প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন।

সাংসদের লোকজন সিলেট-৩ আসনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করছেন, এমন অভিযোগ করে সাহেদ হোসেন বলেন, ‘সাংসদ ও তাঁর অনুসারীরা দুর্নীতির মাধ্যমে সিলেট-৩ আসনভুক্ত এলাকাকে নিজেদের করদরাজ্যে পরিণত করেছেন। সম্প্রতি একটি পথসভায় আমাদের দলীয় এক নেতাকে প্রকাশ্যে কান ধরিয়ে ওঠবস করিয়েছেন এই সাংসদ।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিও সাংসদের কারণে হচ্ছে না, অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০৪ সালে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ১৪ বছর পার হতে চলেছে। নিজের লোকদের সুবিধাজনক পদে রাখা যাবে না দেখে টালবাহানা করে সাংসদ উপজেলা সম্মেলন পিছিয়ে দিচ্ছেন। ফলে দলের নেতা-কর্মীরা আগ্রহ হারিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। দক্ষিণ সুরমার ১০টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলেও কোনোটিতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। সাংগঠনিক কার্যক্রমকে গতিশীল না করে উল্টো গত নয় বছরে সাংসদ দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নির্যাতন করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মতিন, মাসুক উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক আবদুর রব, বন ও পরিবেশ সম্পাদক মোহাম্মদ বশির, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবদুল আহাদ, কার্যকরী সদস্য জামাল উদ্দিন, আনছার আলী, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, তপন চন্দ্র পাল, রফিকুল ইসলাম, বোরহান উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে আছেন। উপজেলা কমিটির নামে সংবাদ সম্মেলন করাটা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী উল্লেখ করে সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে নেই, এমন একজন কেন্দ্রীয় নেতা আমার আসনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বঞ্চিত হবেন, এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এখন দলের ভেতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টায় আছেন। আমি এ বিষয়ে সংগঠনের কাছে বিচার চাইব।’