পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই থাই এয়ারে পুলিশের এসআই!

আত্মীয়কে এগিয়ে দিতে পুলিশের পোশাক পরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্যাংককগামী থাই এয়ারওয়েজের বিমানে উঠে বসেছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশিকুর রহমান। বিষয়টি ধরা পড়লে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ রয়েছে বলে পাইলট বিমান চালাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে এক ঘণ্টা দেরিতে উড়োজাহাজটি আকাশে ওড়ে।

গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। ব্যাংককগামী টিজি-৩৪০ উড়োজাহাজটির শনিবার রাত দুইটার সময় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। পরে সিভিল অ্যাভিয়েশন ও শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে রাত তিনটার দিকে উড়োজাহাজটি এক ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা ছাড়ে।

আলোচিত এসআই আশিকুর রহমান ঢাকা রেঞ্জে কর্মরত। সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) থেকে এখানে বদলি হয়েছেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জ বলে তিনি বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পুলিশ ও বিমানবন্দরে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা নানাভাবে চেষ্টা করে গেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

১০ শর্তে প্রায় দুই বছর পর আজ রোববার বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পরিবহনে বাধা কাটে। নিরাপত্তাসহ কয়েকটি কারণে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মধ্যেই শনিবারের এ ঘটনা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিব্রত করেছে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, শনিবার রাতে রেঞ্জ পুলিশের নীল ইউনিফরম পরে এসআই আশিকুর রহমান বিমানবন্দরে ঢোকেন। কর্মকর্তারা তাঁকে আটকালে তদন্তের প্রয়োজনে ভেতরে যাওয়া প্রয়োজন বলে তিনি গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে যান। পরে তাঁকে আবিষ্কার করা হয় থাই এয়ারওয়েজের ভেতরে। বিমানটি তখন উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় বিমানে তাঁর বেআইনি অবস্থান শনাক্ত হলে বিমানকর্মীরা তাঁকে নামিয়ে আর্মড পুলিশের হেফাজতে দেন। বিমানটির উড্ডয়ন বাতিল করা হয়। ভ্রমণের ন্যূনতম কাগজপত্র ছাড়া বিমানে কারও উঠে বসার পরে নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখিয়ে বিমান চালাতে অস্বীকৃতি জানান ক্যাপ্টেন।

এরপরে সিভিল এভিয়েশন ও বিমানবন্দরের লোকজন বিমানটির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দেনদরবারের পরে তিনি বিমান নিয়ে আকাশে ওড়েন।

আটকের পর ওই এসআই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেন, তিনি তাঁর মামিকে এগিয়ে দিতে বিমানের ভেতরে গিয়েছিলেন।

এদিকে এ ঘটনায় চরম বিব্রত হয়েছেন বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা। অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। কেউ কেউ বিষয়টিকে গণমাধ্যমে না আনার কথা বলেছেন। তবে বিষয়টি যে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘন, তা সবাই স্বীকার করেছেন। সাধারণত বিমানবন্দরের এমন জায়গায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, তল্লাশি ছাড়া কারোরই ঢোকার কথা নয়।

শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশের পোশাকের এ ধরনের অপব্যবহার খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা যখন অনেক চেষ্টার পরে একটা ফল (যুক্তরাজ্যের কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার) পেতে যাচ্ছি, তার আগের দিন পুলিশ কর্মকর্তার এ ঘটনা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা পুলিশের সর্বোচ্চ মহলের কাছে তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করব। আমরা একদিকে চেষ্টা করে যাচ্ছি, আর এর মধ্যে ইউনিফরমধারী কেউ যদি এ রকম করেন, তাহলে তো চলবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের ঘটনা ঠেকানো যাবে না।’

তবে এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানায় কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু জানানো হয়নি, আর পুলিশের কোনো লোককে থানা হেফাজতে রাখাও হয়নি।’

বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশিদা সুলতান, গতকাল বিকেলেও এ ঘটনার কিছুই জানেন না বলে প্রথম আলোকে জানান। তবে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আটক আশিকুরকে গতকাল দুপুরে ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।