চুরির অপবাদে শিশুকে এমন নির্যাতন!

চুরির অপবাদে ১০ বছর বয়সের মো. ইদুকে পাইপ ও রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। ছবিটি রোববার বিকেলে কিশোরগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতাল থেকে তোলা। কিশোরগঞ্জ, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮। ছবি: তাফসিলুল আজিজ
চুরির অপবাদে ১০ বছর বয়সের মো. ইদুকে পাইপ ও রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। ছবিটি রোববার বিকেলে কিশোরগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতাল থেকে তোলা। কিশোরগঞ্জ, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮। ছবি: তাফসিলুল আজিজ

চুরির অপবাদে ১০ বছর বয়সের এক শিশুকে পাইপ ও রড দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার কিশোরগঞ্জে এ ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে আহত শিশুটির চিকিৎসা চলছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে শিশুটির পরিবার।

আহত শিশুর নাম মো. ইদু (১০)। সে শহরতলির পূর্ব তারাপাশা এলাকার সোহরাব উদ্দিনের ছেলে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইদু সবার ছোট। গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুটিকে কিশোরগঞ্জ শহরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শহরের মোরগমহাল এলাকায় বড় ভাই সুজনের ভাঙারির দোকান থেকে বাড়ি ফিরছিল ইদু। রেলস্টেশনের কাছাকাছি বটতলা এলাকায় পৌঁছালে বকুল মিয়া (৩০) তার পথ আটকে দাঁড়ান। বকুল নিউটাউন এলাকার কেন্তু মিয়ার ছেলে। তাঁর দোকান থেকে দুটি সরু প্লাস্টিকের পাইপ চুরির অভিযোগ তুলে ইদুকে মারধর করেন বকুল। এরপর তাকে কাছের জিআরপি থানায় রেখে আসেন বকুল। খবর পেয়ে ইদুর মা রাজিয়া আক্তার থানা থেকে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনেন।

রাজিয়া আক্তার অভিযোগ করে প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে ছাড়িয়ে আনার সময় থানার পাশ থেকে বকুল ফের তাঁর ছেলেকে ধরে নিয়ে যান। পরে নিজের আইসক্রিম কারখানায় ইদুকে সারা রাত আটকে রেখে পাইপ ও রড দিয়ে বেদম মারধর করেন বকুল। মারধরের কারণে ইদুর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিসহ দুটি আঙুল ফেটে যায়। এ সময় যন্ত্রণায় শিশুটি চিৎকার করলেও তাকে ছাড়েননি বকুল। গত শনিবার সকালে ছাড়া পাওয়ার পর ইদু খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাড়ি ফেরে। এরপর তাকে কিশোরগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা।

হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মুশহারাত বলেন, ইদুর চিকিৎসার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার পর তাকে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরে মারধরের আঘাত পাওয়া গেছে।

রোববার হাসপাতালে ইদু বলেছে, সে ভাইয়ের দোকানে থাকে। পাইপ চুরির বিষয়ে কিছুই জানে না। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। ইদুর ভাই রাজন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই ইদুকে বেদম মারপিট করেছেন বকুল। এ বিষয়ে তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বকুলের মোবাইল ফোনে চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জ জিআরপি থানার উপপরিদর্শক মো. কবির উদ্দিন বলেন, ‘বকুল শিশুটিকে থানায় দিয়ে গিয়েছিল। পরে মাকে ডেকে তাঁর হাতে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়। পরে কে বা কারা শিশুকে মারধর করেছে, তা আমরা বলতে পারি না।’

ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার দিন তিনি ছুটিতে ছিলেন। রোববার থানায় এসে ইদুকে মারধরের ঘটনা শুনেছেন। শিশুটিকে হাসপাতালে দেখে আসার জন্য পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।