আসামিরা প্রকাশ্যে, মামলা প্রত্যাহারে হুমকি

সিলেটের টিলাগড় এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা ওমর মিয়াদ ও তানিম খানের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গতকাল দুপুরে এমসি কলেজের সামনে মানববন্ধন করা হয়। ছাত্রলীগের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।  ছবি: প্রথম আলো
সিলেটের টিলাগড় এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা ওমর মিয়াদ ও তানিম খানের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গতকাল দুপুরে এমসি কলেজের সামনে মানববন্ধন করা হয়। ছাত্রলীগের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। ছবি: প্রথম আলো

• মিয়াদ ও তানিম হত্যা।
• সিলেটের দুই কলেজে বিক্ষোভ, মানববন্ধন।
• ছাত্রলীগের ব্যানারে মানববন্ধন হলেও সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা একাত্ম হন।

সিলেট নগরের টিলাগড়কেন্দ্রিক দ্বন্দ্বে খুন হওয়া ছাত্রলীগের দুই কর্মী ওমর মিয়াদ ও তানিম খান হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আসামিরা মামলা প্রত্যাহারে বাদীপক্ষকে নানা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। গতকাল রোববার সিলেটের দুটি কলেজে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে এমন অভিযোগ করেছেন মিয়াদ ও তানিমের পরিবারের সদস্যসহ সহপাঠীরা।

গতকাল দুপুরে সিলেটের এমসি কলেজ ও সিলেট সরকারি কলেজে পৃথক দুটি মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ব্যানারে মানববন্ধন হলেও এতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা একাত্ম হয়ে হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

দুপুর ১২টায় এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশও হয়। কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য ও তানিম খান হত্যা মামলার বাদী দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক হোসাইন আহমদের সঞ্চালনায় সমাবেশে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, সঞ্জয় চৌধুরী ও মিঠু তালুকদার বক্তব্য দেন।

তানিম ও মিয়াদ হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, হত্যা মামলার আসামিরা ফেসবুকে ছবি দিয়ে সক্রিয় অবস্থার জানান দিচ্ছেন। মিয়াদের সহপাঠী, আন্দোলনকারীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। মামলার আসামিরা প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করছেন।
এমসি কলেজের পর সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের মানববন্ধন চলাকালে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক কনক পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সিলেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নাসিমা হক খান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বক্তব্য দেন।

আতাউর রহমান বলেন, ‘তানিম হত্যাকারীদের কঠিন সাজা হলে সন্ত্রাসীরা এমন অপকর্মে জড়াতে ভয় পাবে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসীদের আধিপত্য রোধে পুলিশ প্রশাসনকে ভূমিকা রাখতে হবে।’
দুই কলেজে পৃথক মানববন্ধন শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একসঙ্গে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলটি সরকারি কলেজের প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে সিলেট-তামাবিল সড়ক দিয়ে এমসি কলেজ প্রদক্ষিণ শেষে আবার সরকারি কলেজে গিয়ে শেষ হয়।

তানিম খান ছিলেন সিলেট সরকারি কলেজের স্নাতক (পাস) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী। গত ৭ জানুয়ারি রাতে অতর্কিত হামলায় তিনি গলায় ছুরিকাহত অবস্থায় ঘটনাস্থলে মারা যান। ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে টিলাগড় এলাকায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সশস্ত্র মহড়া দেওয়ার ঘটনার জের ধরে তানিমকে গলায় ছুরিকাঘাত হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনায় তানিমের পরিবারের কেউ মামলা করতে রাজি হননি। তবে তানিমের সহপাঠী দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে নগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমানের ভাতিজা সিদ্দিকুর রহমান ওরফে আজলাসহ ২৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
টিলাগড় এলাকায় ওমর মিয়াদ খুন হন গত বছরের ১৬ অক্টোবর। টিলাগড়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে ওমর মিয়াদকে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ওমর মিয়াদ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরন মাহমুদ পক্ষের কর্মী ছিলেন। এ ঘটনায় তাঁর বাবা আকুল মিয়া বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীকে। ১৮ অক্টোবর মামলা দায়েরের পরপরই জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

দুই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশ সূত্র জানায়, মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় করা দুটি মামলার তদন্ত এখনো চলছে। ওমর মিয়াদ হত্যা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক। তানিম হত্যা মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ওরফে ডায়মন্ডসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি আসামিদের মধ্যে দুজন জামিনে ও বাকিরা পলাতক।

গতকাল দুটি কলেজে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ থেকে দুই হত্যা মামলার আসামিদের প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করা ও বাদীপক্ষকে হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ওসি আখতার হোসেন গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, কোনো আসামিই প্রকাশ্যে নেই। আসামিদের ধরতে জেলার বাইরেও অভিযান চালানো হয়েছে। সবাই পলাতক।
হুমকির প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘এ অবস্থায় আসামিরা যদি হুমকি দেন, তাহলে বিষয়টি পুলিশকে জানালে আমরা এই সূত্র ধরে আসামিদের ধরতেও পারব।’