শিশুকে আসামি করায় বাদী কারাগারে

মায়ের কোলে চড়ে আদালতে হাজিরা দিতে আসে দুই বছর বয়সী মো. আরিফ। বকশীগঞ্জ, জামালপুর, ১৯ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
মায়ের কোলে চড়ে আদালতে হাজিরা দিতে আসে দুই বছর বয়সী মো. আরিফ। বকশীগঞ্জ, জামালপুর, ১৯ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

টাকা আত্মসাতের মামলায় দুই বছরের শিশুকে আসামি করায় কারাগারে যেতে হলো বাদীকে। মিথ্যা মামলা ও সাক্ষ্য দেওয়ার দায়ে ওই বাদীকে আজ সোমবার দুপুরে জামালপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ওয়াহিদুজ্জামান কারাগারে পাঠান। 

যে শিশুটিকে আসামি করা হয়, তার নাম মো. আরিফ (২)। সে বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলক্ষিয়া নতুনপাড়া গ্রামের মৃত মো. আলী ব্যাপারীর ছেলে। তার মায়ের নাম অবিরণ বেগম।

জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মো. হানিফ ওই শিশুসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন মো. ছোহরাব আলী (৬৫), আহাম্মদ আলী (৭২), মো. শাহামদ্দিন (৭৯), মো. টালী ব্যাপারী (৫৮), মো. জয়নাল আবেদীন (৪২), মো. ফজলুল হক (৩০) ও শিশু মো. আরিফ (২)। তাঁদের সবার বাড়ি নতুনপাড়া গ্রামে।

মামলা ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি নিলক্ষিয়া নতুনপাড়া গ্রামের মো. হানিফ জমি বাবদ ১ লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ওই শিশুসহ সাতজনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ আমলি আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আজ সোমবার ছিল আসামিদের হাজির হওয়ার তারিখ। আসামিদের মধ্যে একজন শিশুকে দেখে আদালতে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে যান। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ওয়াহিদুজ্জামান দুই পক্ষের কথা শুনে শিশুসহ সব আসামিকে জামিন দেন।
পরে বিচারক ওয়াহিদুজ্জামান নিজে বাদী হয়ে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের ও সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগে ১৯৩ ধারায় ওই মামলার বাদী মো. হানিফের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আজ বিকেলে মো. হানিফকে কারাগারে পাঠানো হয়।

শিশুটির মা অবিরণ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে আমার শ্বশুর জেহার ব্যাপারী তাঁর ভাগনে মো. হানিফকে দান শর্তে ৪ শতাংশ জমি দিয়ে যান। ওই জমিতে তিনি (মো. হানিফ) দখলেও রয়েছেন। আমাদের বেকায়দায় ফেলতে হঠাৎ করে ওই জমি বাবদ টাকার দেওয়ার কথা বলে আদালতে একটি মামলা করেন। এতে আমার শিশুসন্তানকেও আসামি করা হয়। আজ আদালতে হাজিরা থাকায় শিশুসন্তানকে নিয়ে এসেছি। আদালতের বিচারক আমাদের কথা শুনে আমার ছেলের জামিন দিয়েছেন।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী টিটু কুমার সাহা বলেন, ‘মামলা দায়েরের সময় মো. আরিফের বয়স উল্লেখ করা হয়নি। আদালতে হাজির অন্য আসামিদের সঙ্গে শিশু আসামি দেখে উপস্থিত লোকজন হতভম্ব হয়ে যান। আসামিদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বুঝতে পেরে আদালত সব আসামিকে জামিন দেন এবং বাদী মো. হানিফকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’

বাদী মো. হানিফের পক্ষের আইনজীবী সুলতাল উদ্দিন বলেন, ‘মামলার বাদী তথ্য গোপন করে এই মামলাটি করেছেন। মামলার দায়েরের দিন শিশুকে আসামির করা হচ্ছে—বিষয়টি আমি বুঝতে পারিনি। ভুলবশত মামলাটি হয়ে যায়। আদালত বাদীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।’