দুই রোডে নাকাল পুরান ঢাকা

সড়কের অর্ধেকজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে পাইপ। এতে যান চলাচলের স্থান সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। গত রোববার পুরান ঢাকার উর্দু রোড থেকে তোলা।  প্রথম আলো
সড়কের অর্ধেকজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে পাইপ। এতে যান চলাচলের স্থান সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। গত রোববার পুরান ঢাকার উর্দু রোড থেকে তোলা। প্রথম আলো
  • খোঁড়াখুঁড়ির জাঁতাকলে উর্দু রোড।
  • নিরাপত্তার ভোগান্তি নাজিমুদ্দিন রোডে।

পুরান ঢাকার চারটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা চকবাজার, বেগম বাজার, মৌলভীবাজার, ইমামগঞ্জে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান পথ উর্দু রোড ও নাজিমুদ্দিন রোড। সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ি এবং রাস্তা বন্ধ করে রাখায় এই রোডগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে আশপাশের এলাকায়।
স্থানীয় লোকজন বলেন, তিন মাস ধরে উর্দু রোডে খোঁড়াখুঁড়ি করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থাকায় নাজিমুদ্দিন রোডে উল্লেখযোগ্য অংশ ১২ দিন ধরে বন্ধ। এতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই এলাকাগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এই এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমনিতেই সারা বছর চকবাজার, বেগম বাজার, মৌলভীবাজার ও ইমামগঞ্জে যানজট লেগে থাকে। এখন সিটি করপোরেশনের অব্যবস্থাপনা ও পুলিশের নিরাপত্তার কারণে প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরাজ করছে একধরনের স্থবিরতা।
এদিকে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের রাস্তা নাজিমুদ্দিন রোডে যান চলাচল বন্ধ রাখায় দোকানপাটে বেচাকেনা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কবে নাগাদ এই রোডে যান চলাচল শুরু হবে, তা-ও জানেন না তাঁরা।

খোঁড়াখুঁড়ির জাঁতাকলে উর্দু রোড
কারা অধিদপ্তরের সামনে থেকে চকবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত উর্দু রোড। রোববার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, উর্দু রোডের পূর্ব পাশে অর্ধেক রাস্তাজুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। পাইপ বসানো হয়েছে। এখন সে পাইপের ওপর বালু ফেলার কাজ করছেন শ্রমিকেরা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের অংশে প্রায় ২৫-৩০টি বড় কংক্রিটের পাইপ রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। এতে সড়কের পূর্ব অংশে যান চলাচল বন্ধ আছে। পশ্চিম অংশে লেগে আছে যানজট। এর ফলে চকবাজার, বেগম বাজার, মৌলভীবাজার ও ইমামগঞ্জে তীব্র যানজটের সৃষ্ট হয়েছে। এসব এলাকায় গাড়ি ঢুকতে ও বের হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে।
উর্দু রোডের স্থানীয় বাসিন্দা ও চকবাজারের রাফিয়া কসমেটিকসের স্বত্বাধিকারী হাসান আল মামুন বলেন, গত ডিসেম্বরে খোঁড়াখুঁড়ির পর থেকে চকবাজার এলাকায় যানজট বাড়তে থাকে। ২০-২৫ দিন আগে রাস্তায় পাইপ রাখা হয়। ফলে যানজটের তীব্রতা আরও বেড়েছে। ক্রেতারা মালামাল নিয়ে বের হতে পারছেন না। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও কমে গেছে। এই অবস্থায় এসব এলাকায় রাস্তায় কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি বা পিকআপ ঢুকলে তো কথায় নেই।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও পাইপ বসানোর কাজ করছে মোল্লা এন্টারপ্রাইজ। এর মালিক মনির হোসেন বলেন, মার্চে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সংস্কারকাজ শেষ করতে চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু খালেদা জিয়াকে কারাগারে আনার পর এই এলাকায় সব কাজ বন্ধ রাখতে ডিএসসিসিকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। তাই পাইপগুলো রাস্তার ওপর রাখতে হয়েছে।
উর্দু রোড ডিএসসিসির অঞ্চল-৩-এর আওতায় পড়েছে। এই অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাকের প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়াকে এই কারাগারে রাখাকে কেন্দ্র করে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে কাজটি শুরু করতে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন উদ্যোগ নিয়েছেন। আর মাত্র তিন থেকে চার সপ্তাহ কাজ করতে পারলেই সংস্কারকাজ শেষ হবে।

নিরাপত্তার ভোগান্তি নাজিমুদ্দিন রোডে
নাজিমুদ্দিন রোডের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। রায় ঘোষণার পর তাঁকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে নেওয়া হয়। ওই দিন থেকেই নিরাপত্তার কারণে নাজিমুদ্দিন রোডে মাক্কুশা মাজার, চকবাজার, বেগম বাজার ও আবুল হাসনাত রোডের প্রবেশমুখে নিরাপত্তা বসিয়েছে পুলিশ। চার দিন পর এই রোড পথচারীদের জন্য খুলে দেওয়া হলেও এখন এই রোডে রিকশাসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে।
জোনাকি ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী ও মাক্কুশা মাজার ফার্নিচার দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ জিয়াউল হক বলেন, অনেক অনুরোধের পর দোকানপাট খোলার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু সড়কে যান চলাচল না করায় নাজিমুদ্দিন রোডের ৪২টি ফার্নিচারের দোকানে কোনো বেচাকেনা নেই।
এ বিষয়ে চানতে চাইলে চকবাজার থানার ওসি শামীম অর রশিদ তালুকদার বলেন, নিরাপত্তার জন্য এই রোডে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পথচারীদের চলাচলে কোনো বাধা নেই। চকবাজার ও আশপাশের বাণিজ্যিক এলাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। এভাবে সড়কটি কত দিন বন্ধ রাখবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সড়কটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তাঁরা যখন নির্দেশ দেবেন, তখন রাস্তা খুলে দেওয়া হবে।