দোলনায় দোলে 'দ'

দোলনায় দোল খাচ্ছে ‘দ’ অক্ষর। ছবি: প্রথম আলো
দোলনায় দোল খাচ্ছে ‘দ’ অক্ষর। ছবি: প্রথম আলো

ছোট দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে ‘দ’ অক্ষর। ছোট বোতল, খালি প্যাকেটসহ বিভিন্ন আবর্জনা দিয়েই বানানো হয়েছে ‘আ’ অক্ষরটি। ম্যাচের কাঠি দিয়ে ‘ম’, বিভিন্ন ই-বর্জ্য দিয়ে বিজ্ঞানের ‘ব’, কাচের চুড়ি দিয়ে ‘চ’, ছোট ছোট রঙিন ঘুড়ি দিয়ে ‘ঘ’, কাগজ দিয়ে তৈরি মণিপুরী বর্ণমালাসহ ঘরটিতে অসংখ্য অক্ষর। অক্ষরগুলোতে আবেগ ও দরদ মিশে আছে। বিচারকেরা কোনটা রেখে কোনটাকে পুরস্কৃত করবেন, তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তবে যেহেতু প্রতিযোগিতা, তাই পুরস্কারের জন্য শিক্ষার্থীদের তৈরি কিছু বর্ণকে আলাদা করলেন বিচারকেরা।

আজ মঙ্গলবার, কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ের চিত্র এটি। প্রথম আলো আয়োজিত বর্ণমেলা উপলক্ষে বর্ণ বানানো প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের জন্য থাকবে পুরস্কার। বিজয়ীদের পাশাপাশি কাল বুধবার ঢাকায় সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে বর্ণমেলায় সবার বানানো বর্ণ প্রদর্শন করা হবে।

অক্ষরের রাজ্যে বিচারকেরা কোনটা রেখে কোনটাকে পুরস্কৃত করবেন তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। ছবি: প্রথম আলো
অক্ষরের রাজ্যে বিচারকেরা কোনটা রেখে কোনটাকে পুরস্কৃত করবেন তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন। ছবি: প্রথম আলো

শিশু-কিশোরদের মধ্যে বাংলা বর্ণ, ভাষা ও ভাষা আন্দোলনের গৌরবগাথা ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম আলো প্রতিবছর বর্ণমেলার আয়োজন করে। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করে সার্ফ এক্সেল। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় এবং রাজশাহীতে কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে বর্ণমেলা অনুষ্ঠিত হবে। বর্ণমেলা সকাল নয়টায় শুরু হয়ে চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।

বর্ণ বানানো প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সমরজিৎ রায়চৌধুরী, চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক আবুল বারক আলভী এবং ফ্রিল্যান্স শিল্পী আবদুল মান্নান। এই বিচারকদের সার্বিক সহায়তা করেন শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান এবং প্রথম আলোর প্রধান শিল্প নির্দেশক অশোক কর্মকার।

পাতা দিয়ে তৈরি করা হয় স্বরবর্ণ ‘অ’। ছবি: প্রথম আলো
পাতা দিয়ে তৈরি করা হয় স্বরবর্ণ ‘অ’। ছবি: প্রথম আলো

একদম ছোটদের বা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ক গ্রুপ, চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা খ গ্রুপ এবং সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গ গ্রুপে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এতে সারা দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে।

এ প্রতিযোগিতা নিয়ে অধ্যাপক সমরজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, এ প্রতিযোগিতায় শিশুরা খেলার ছলেই নানা রকম বর্ণ তৈরি করে। এ খেলাটিতে তারা মজা পায়। এতে বর্ণমালার প্রতি আসক্তিও তৈরি হয়।

অধ্যাপক আবুল বারক আলভী বলেন, একেকটি অক্ষর তৈরি, অক্ষরের বিন্যাস, কম্পোজিশনে শিশুদের কষ্ট করতে হয়েছে। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে তারা ক্রিয়েটিভ কিছু করতে পেরেছে। চাল, ডাল, ই-বর্জ্য, ফুল যে যা পেয়েছে তাই দিয়েই সাজিয়েছে অক্ষরগুলোকে।

বিচারকের হাতে মণিপুরী এক বর্ণ। ছবি: প্রথম আলো
বিচারকের হাতে মণিপুরী এক বর্ণ। ছবি: প্রথম আলো

শিল্পী আবদুল মান্নান বলেন, ‘শিশুরা একেকটি অক্ষরকে অসাধারণ করে ফুটিয়ে তুলেছে। বাংলা ভাষার প্রতি শিশুদের শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে। এ কাজটিতে শিশুদের আবেগ ও দরদ জড়িয়ে আছে। শিশুরা অক্ষর নিয়ে অদ্ভুত সুন্দরভাবে চিন্তা করছে। এ আয়োজন অব্যাহত থাকুক।’

বিজয়ী হয়েছে যারা

ক গ্রুপে ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের তাহিয়া তাবাসসুম নাবিহা প্রথম, আল ম্যাকমো স্কুলের জুমায়রা হায়দার দ্বিতীয় এবং লিটল অ্যাঞ্জেলস স্কুলের নাবিহা তাছফিয়াহ জামান তৃতীয় হয়েছে।

খ গ্রুপে শিমুল প্রি ক্যাডেট স্কুলের রাইসা ফাতেমা পারমিতা প্রথম, হলিক্রস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের রামিসা তারান্নুম দ্বিতীয় এবং ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের ইনলিন আলী তনিমা তৃতীয় হয়েছে।

গ গ্রুপে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের মাহির দাঈয়ান হা-মীম প্রথম, বিয়াম মডেল স্কুলের কোংখাম পারিতান ইনিল দ্বিতীয় এবং ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের ফাতিমা তাসফিয়া তাহমিনা তৃতীয় হয়েছে।