এক দেশে দুই আইন কি না, জানতে চান খসরু

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। এ সময় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর নাসিমন ভবনের সামনে থেকে ছবিটি তোলা। ছবি: জুয়েল শীল
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। এ সময় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর নাসিমন ভবনের সামনে থেকে ছবিটি তোলা। ছবি: জুয়েল শীল

এক দেশে দুই আইন আছে কি না, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানতে চেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, যদি আওয়ামী লীগের জন্য এক রকম এবং বিএনপির জন্য আরেক রকম আইন থাকে, তখন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপারে দেশের জনগণ অচিরেই সিদ্ধান্ত নেবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ মন্তব্য করেন। নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবন চত্বরে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আমীর খসরু বলেন, চুপি চুপি টেবিলের নিচে দুই রকম আইনের ব্যবহার করবেন না। আপনাদের একটি আইনই কেবল ব্যবহার করতে হবে। কারণ, সংবিধানে সবার জন্য সমান অধিকারের কথা বলা আছে। সবার প্রতিবাদ এবং কর্মসূচি পালনের কথাও বলা আছে।

বিএনপি এই নেতা বলেন, ‘৮ ফেব্রুয়ারি শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানতে চাই, সেদিন কি ১৪৪ ধারা জারি ছিল? কী অপরাধে শাহাদাতকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, সেটাও আমরা জানতে চাই। আর সেদিন আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারীরা রাস্তায় ছিল।’ অস্ত্রধারী কাউকে সেদিন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কি না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানতে চান তিনি।

আমীর খসরু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাইরে (খোলা ময়দান) আমি জনসভা করতে চেয়েছিলাম। আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমাকে কেন এখানে (নাসিমন ভবন চত্বর) সভা করতে হচ্ছে? কেন আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি তা জানতে চাই। আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছি। আওয়ামী লীগ লালদীঘি ময়দান বা রাস্তায় জনসভা করবে না? যদি তারা জনসভা করে থাকে, সেটাও আমাদের বলতে হবে। তাহলে আমরা অনুরূপভাবে কর্মসূচি পালন করব।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে আমীর খসরু বলেন, আজ লক্ষ-কোটি জনতা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযানে নেমেছে। আওয়ামী লীগ পরিবারের লোকজনও স্বাক্ষর দিতে চায়। যেখানে গিয়েছি, সবাই বলেছেন তাঁরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সই দিতে চান। রিকশাচালক, ঠেলাগাড়িচালক থেকে শুরু করে সবাই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন। বাংলাদেশ আজ খালেদা জিয়ার জন্য নীরবে কাঁদছে, দেশের মানুষ কাঁদছে। এই মানুষগুলো সুশৃঙ্খল কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে হবে।

আমীর খসরু বলেন, বিএনপি ধ্বংস নয়, শান্তির পথে। ধ্বংসের পথে হাঁটছে সরকার। বিএনপি লড়ছে গণতন্ত্র, জনগণের ভোটাধিকার ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে। বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে জনগণনির্ভর। আর আওয়ামী লীগ নির্ভরশীল দলীয় সরকারি বাহিনীর ওপর। সরকারি যন্ত্র ব্যবহার করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু সরকারি বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্য দেশের জনগণের সঙ্গে আছে। আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে কিছু লুটেরা চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী। তবে তারাও একদিন জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে, তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে।

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম। সভায় উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির সহসভাপতি এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, যুগ্ম সম্পাদক এস এম সাইফুল আলম ও ইয়াসিন চৌধুরী, নগর যুবদলের সভাপতি কাজী বেলাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়টি প্রহসনমূলক ও বিস্ময়কর। কথিত বিচারের নামে সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই অংশ।

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেছেন, নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতীক খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করা হবে। সরকার আদালতের দোহাই দিলেও দেশের মানুষ জানে কাদের ইশরায় খালেদা জিয়াকে বন্দী করা হয়েছে।