পরিচিতি ফলকে ইংরেজি

• লোকজনের মানসিকতাকে দায়ী করছেন শিক্ষাবিদেরা।
• সিটি করপোরেশনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

দোকানে দোকানে ইংরেজি ভাষার পরিচিতি ফলক। গতকাল প্রবর্তক মোড়ে।  প্রথম আলো
দোকানে দোকানে ইংরেজি ভাষার পরিচিতি ফলক। গতকাল প্রবর্তক মোড়ে। প্রথম আলো

প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি ফলক (সাইনবোর্ড) বাংলায় করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত চার বছর আগে। তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে সিটি করপোরেশনগুলোকে চিঠি দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই নির্দেশনা কার্যকরের জন্য প্রতিবছরই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এরপরও চট্টগ্রাম নগরের সব সাইনবোর্ড বাংলায় রূপান্তর করা হয়নি।

সাইনবোর্ড এখনো পুরোপুরি বাংলায় না হওয়ার পেছনে লোকজনের মানসিকতাকে দায়ী করছেন শিক্ষাবিদেরা। তাঁদের মতে, এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইনবোর্ডগুলো বাংলায় রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় সিটি করপোরেশন। প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার পরিকল্পনা আছে সংস্থাটির।

২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এক আদেশে দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বর প্লেট, সরকারি দপ্তরের নামফলক এবং গণমাধ্যমে ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। আদালতের আদেশের তিন মাস পর ২০১৪ সালের ১৪ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলোকে আদেশটি কার্যকর করতে বলে।

এরপর ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশনগুলোকে একটি চিঠি দিয়ে জানায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন এলাকায় অনেক সাইনবোর্ড এখনো শুধু ইংরেজিতে লেখা। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় লেখা নিশ্চিত করতে হবে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, অক্সিজেন, হামজারবাগ, প্রবর্তক মোড়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকা, চকবাজার, মোমিন রোড, জামালখান, লাভ লেন, কাজীর দেউড়ি ও আন্দরকিল্লা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাই রয়েছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড শুধু ইংরেজিতে লেখা রয়েছে।

জিইসি মোড়, জামালখান ও ২ নম্বর গেট এলাকায় অন্তত চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক, বিক্রয়কর্মী ও তিনজন দোকানি জানান, সাইনবোর্ড বাংলায় লেখার নির্দেশনার বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও তাঁদের কখনো বলা হয়নি।

এখনো সাইনবোর্ড বাংলায় না লেখার পেছনে মাতৃভাষার প্রতি চরম অবহেলা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও লেখক মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাইনবোর্ড বাংলায় রূপান্তর করতে হলে প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি সাইনবোর্ড স্থাপনকারী সংশ্লিষ্ট লোকজনকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তখন সবাই আইন মানবে এবং জনগণের মাঝে সচেতনতাও বাড়বে।

এদিকে, বাংলা ভাষায় সাইনবোর্ড না লেখায় ১৫ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুধু ইংরেজিতে লেখা সব ধরনের সাইনবোর্ড নিজ উদ্যোগে অপসারণ করে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় লিখে প্রতিস্থাপন করতে হবে। না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় পরিচিতি ফলক বাংলায় লেখার হার বেড়েছে বলে দাবি করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এখন থেকে যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলায় সাইনবোর্ড লিখবে না সেগুলোর সাইনবোর্ড অপসারণ করা হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে আর্থিকভাবে জরিমানা করার পরিকল্পনাও রয়েছে।