শূন্যরেখায় আটক রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার

• মঙ্গলবার দুই দেশের কর্মকর্তাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
• এত দিন মিয়ানমার এসব লোকজনকে বাংলাদেশে চলে যেতে বলেছিল।
• প্রায় ছয় মাস ধরে সীমান্তের শূন্যরেখায় আটকে আছে এসব রোহিঙ্গা।
• আটক রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টিতে বাংলাদেশ জোর দিচ্ছে।

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের শূন্যরেখায় আটকে থাকা সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে উত্তর রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচয় যাচাইসহ কোনো রকম শর্ত আরোপ করবে না বলে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে মিয়ানমার।

সীমান্তের শূন্যরেখায় আটকে থাকা এসব রোহিঙ্গার বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার উত্তর রাখাইনের ঢেকিবুনিয়ায় দুই দেশের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বাংলাদেশের এবং মংডু জেলার প্রশাসক ইয়ে হুটস তাঁর দেশের নেতৃত্ব দেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, শূন্যরেখায় আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আগে একটি তালিকা করার কথা বলেছেন মংডু জেলার প্রশাসক ইয়ে হুটস। এরপর ওই তালিকা দেখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এত দিন মিয়ানমার এসব লোকজনকে বাংলাদেশে চলে যেতে বলেছিল। এমনকি দুই সপ্তাহ আগেও এসব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে চলে যেতে মাইকে প্রচারণা চালায় মিয়ানমার। এমন এক পরিস্থিতিতে শূন্যরেখায় আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে শেষ পর্যন্ত রাজি হলো মিয়ানমার।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ তৈরির অংশ হিসেবে প্রায় ছয় মাস ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় আটকে থাকা এসব মানুষকে ফেরানোর বিষয়টিতে বাংলাদেশ জোর দিচ্ছে। প্রত্যাবাসনের মাঠপর্যায়ের চুক্তিতে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা আছে। গত শুক্রবার ঢাকায় দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এসব মানুষের বিষয়ে একটি আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মংডুতে দুই দেশের কর্মকর্তাদের বৈঠকটি হয়েছে।

রাখাইনের ওই আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘শূন্যরেখায় আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মিয়ানমারের জাতীয় পরিচয় যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই। নিঃশর্তভাবে তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। আটকে থাকা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছি। এ সময় রোহিঙ্গারা স্পষ্ট করেই বলেছে, মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে তারা বিধ্বস্ত বাড়িঘরেই ফিরতে তৈরি আছে। মিয়ানমার এসব লোকজনকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে।’

মো. আবদুল মান্নান জানান, শূন্যরেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা কীভাবে আছে এবং কেন তাদের এখানে রাখা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও আসতে পারছে না, আবার বাড়ি-ঘরেও যেতে পারছেন না—বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগেও এসব ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে।

 আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলটি গতকাল সড়কপথে কক্সবাজার থেকে প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম যায়। এরপর সীমান্তে মৈত্রী সেতু অতিক্রম করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের গাড়িতে চড়ে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে ঢেকিবুনিয়ায় যায়। প্রতিনিধিদলটি শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও কথা বলেছে।

গতকালের ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধিকে জানান, মিয়ানমার অংশের ঢেকিবুনিয়া থেকে তুমব্রু কোনাপাড়ার শূন্যরেখা পর্যন্ত যাওয়ার পথে শুধুই ধ্বংসস্তূপ চোখে পড়েছে। নির্বিচারে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু এলাকায় অস্থায়ী আশ্রয়শিবির নির্মাণের কাজ হচ্ছে। নতুন নির্মিত হওয়া একটি শিবিরও পরিদর্শন করেন তাঁরা। তবে শিবিরের কক্ষগুলো খুব ছোট। দুই কক্ষের ঘরে একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে রাখা হবে।