আইএস সদস্যের সঙ্গে মোমেনার 'গোপন প্রেম'

মোমেনা সোমা
মোমেনা সোমা

অস্ট্রেলিয়ায় একটি সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা বাংলাদেশি ছাত্রী মোমেনা সোমা (২৪) একসময় আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একজন সদস্যের সঙ্গে ‘গোপন প্রেমে’ জড়িয়েছিলেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের পুলিশ।

৯ ফেব্রুয়ারি মেলবোর্নের একটি বাড়িতে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগে মোমেনাকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ বলছে, তিনি আইএসের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওই হামলা চালিয়েছেন। এ ঘটনার আট দিন আগে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় যান।

বাংলাদেশের পুলিশের ভাষ্য, মোমেনার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বাংলাদেশি সাবেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নজিবুল্লাহ আনসারির। পরিবার রাজি না থাকার কারণে তাঁদের ওই সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। পরে নজিবুল্লাহ আইএসের হয়ে লড়াই করতে ইরাকে চলে যান বলে জানা যায়।

ঢাকার একটি উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মোমেনার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছে ‘ভিক্টোরিয়ান জয়েন্ট কাউন্টার টেররিজম টিম’ নামের অস্ট্রেলীয় পুলিশের সন্ত্রাস দমন ইউনিট। তাঁর একসময়ের প্রেমিক নজিবুল্লাহ আনসারি আইএসের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের সম্ভ্রান্ত পরিবারের কিছু তরুণের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এই জঙ্গি সংগঠন।

বাংলাদেশের পুলিশ বলছে, তারা নজিবুল্লাহর সঙ্গে মোমেনার কথিত গোপন প্রেম-রোমান্স নিয়ে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করছে। আইএসে যোগ দিতে যাচ্ছেন—নিজের ভাইকে ২০১৫ সালে ফেসবুকে এ কথা জানানোর পর উধাও হয়ে যান নজিবুল্লাহ।

২০১৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পেছনে নব্য জেএমবি ছিল। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ পুলিশ নজিবুল্লাহকে এই জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। ওই হামলায় মোমেনার সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

নজিবুল্লাহ রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেছেন। এরপর মালয়েশিয়ান মেরিন একাডেমিতে পড়তে যান। ২০১২ সালে সেখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। এরপর বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৫ সালে তাঁর সঙ্গে পরিবারের শেষবার যোগাযোগ হয়। জঙ্গিবাদে জড়ানোর পর মোহভঙ্গ হওয়ায় বাংলাদেশে ফিরে গাজী সোয়ান নামের একজনের পুলিশকে দেওয়া স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, সোয়ানের সঙ্গে নজিবুল্লাহর তুরস্কে দেখা হয়েছে। কিন্তু এরপর বারবার চেষ্টা করেও তিনি নজিবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। সোয়ানের ধারণা, নজিবুল্লাহ তুরস্ক সীমান্তে নিহত হয়েছেন।

২০১৪ সালের শেষ দিকে নজিবুল্লাহর সঙ্গে মোমেনার বিয়ের কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। পরের বছর জঙ্গিবাদে জড়ান মোমেনা। বিভিন্ন ভাষার ছাত্রী মোমেনা তুরস্কের আতিলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও ভিসা পাননি। পরে স্টুডেন্ট ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে লা ট্রোব ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। অস্ট্রেলিয়ায় ওই রকম হামলা চালানোর কথা তিনি আগেই তাঁর বোনকে জানিয়েছিলেন।

মোমেনা ও নজিবুল্লাহর মধ্যে সম্পর্ক থাকার পরও তাঁদের বিয়ে না হওয়া প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে, মোমেনা বা নজিবুল্লাহর অভিভাবকেরা মনে করতেন, তাঁদের ছেলে বা মেয়ের কাঙ্ক্ষিত জন অতিরক্ষণশীল। তাই এ সম্পর্ক আর এগোয়নি।

৯ ফেব্রুয়ারি মোমেনা মেলবোর্নে রজার সিংগারাভেলু নামের এক ব্যক্তির ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ করেছে অস্ট্রেলীয় পুলিশ। ওই সময় রজার তাঁর বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। হামলার সময় মোমেনার মুখ ঢাকা ছিল। আহত অবস্থায় রজারকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে পাঠায়। পরে বাড়ি ফেরেন রজার। হাতে আঘাত পাওয়ায় মোমেনাকেও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

মেলবোর্নে মোমেনাকে গ্রেপ্তারের পর গত সপ্তাহে তাঁর ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে ঢাকার কাজীপাড়ায় তাঁদের বাসায় যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল। একপর্যায়ে মোমেনার ছোট বোন আসমাউল হুসনা সুমনা এই ইউনিটের এক কর্মকর্তার ওপর ছুরি নিয়ে হামলা চালান। পুলিশের অন্য সদস্যরা তাঁকে ধরে ফেলেন।