মেঘালয়ের ভোটে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ

নিজেদের বিকাশের স্বার্থেই বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় ভারতের মেঘালয়ের সব কটি রাজনৈতিক দল। ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্যটির রাজনৈতিক নেতারা বুঝতে পারছেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কই পারে পর্যটন থেকে শুরু করে শিক্ষা, শিল্প ও বাণিজ্যে রাজ্যের উন্নয়ন ঘটাতে। ভোটে দলীয় ইশতেহারের বাইরেও তাই সব দলকেই দেখা গেল বাংলাদেশকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে। এমনকি নতুন ভোটাররাও বলছেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্কই খুলে দিতে পারে উন্নয়নের নতুন দিশা।
২২ হাজার ৪৩০ বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট রাজ্য মেঘালয়। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জনসংখ্যা ৩২ লাখ ১১ হাজার ৪৭৪। এর মধ্যে ভোটার ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৪৮৭ জন। বাংলাদেশের সঙ্গে মেঘালয়ের সীমান্ত দৈর্ঘ্য ৪৪৩ কিলোমিটার। ডাউকি সবচেয়ে পরিচিত স্থলবন্দর এবং শিলং, চেরাপুঞ্জি, তুরা খুবই পরিচিত পর্যটনকেন্দ্র। মেঘালয় খাসি, জৈন্তিয়া ও গারো পাহাড়ের জনপদ। তিনটি পাহাড়ি জনপদের মধ্যে অমিল প্রচুর; তবে মিল হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে সবারই রয়েছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত। উপজাতি-অধ্যুষিত রাজ্যটির খ্রিষ্টান ৭৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ মানুষ। হিন্দু ও মুসলিমদের সংখ্যা যথাক্রমে ১১ দশমিক ৫৩ ও ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাংলাভাষী আছে প্রায় ৭ শতাংশ। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট। অথচ ভোটকে ঘিরে বাড়তি কোনো জৌলুশ নেই কোথাও। মেঘালয়ের মোট ভোটারের অর্ধেকের বেশি নারী, ৯ লাখ ২৪ হাজার ২৬৪ জন। বর্তমানে ১২ জনের মন্ত্রিসভায় রয়েছেন দুজন নারী মন্ত্রী। আর বিধায়ক আছেন চারজন। এবারের ভোটে স্বতন্ত্র ছাড়াও ১৫টি দলের প্রার্থীরা লড়ছেন। ৩৭০ জন প্রার্থীর মধ্যে নারী ৩২ জন। সব কটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে একমাত্র কংগ্রেস। তাদের লড়াই আঞ্চলিক দল এনপিপির সঙ্গে। এনপিপির প্রার্থীর সংখ্যা ৫২। বিজেপি ৪৭টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। বিজেপি আগে মেঘালয়ে কোনো আসন না জিতলেও এবার ভালো ফলের আশা করছে। রাজ্যে একমাত্র জোট হয়েছে ইউডিপি, এইচএসপিডিপি ও জিএনসির মধ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল এবার আটটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি শিবুন লিংডো প্রথম আলোকে বলেন, টানা ১৫ বছরের কংগ্রেস শাসনের দুর্নীতিই তাঁদের প্রধান ইস্যু। বিজেপি জিতলে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের ভিত্তিতে রাজ্যের উন্নয়নে গতি আনা হবে বলে জানিয়ে দেন তিনি। ইউডিপির সাধারণ সম্পাদক পল লিংডো দাবি করেন, তিনটি ‘ই’ এবার তাঁদের ইস্যু। এডুকেশন, ইকোলজিকাল ব্যালান্স ও এনভায়রনমেন্ট (শিক্ষা, প্রতিবেশগত ভারসাম্য ও পরিবেশ)। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এনপিপির সিআর লিংডো কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অপশাসনের অভিযোগ তোলেন। দাবি করেন, তাঁর দল নির্বাচনে জিতবেই। জিতে ডাউকিসহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন।
রাজধানী শিলংয়ের কলেজপড়ুয়া পূজা দেবনাথ, রুকেশ রয় ও মৃদুশ্মিতা দাশের চাওয়া—ভোটে যে দলই জিতুক, তারা যেন স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান ও অবকাঠামোর উন্নয়নে মনোযোগ দেয়। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও মনোযোগ চান তাঁরা। প্রত্যাশা করেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো হোক, সহজ হোক দুই দেশের বাসিন্দাদের যাতায়াত।