পূর্বাচলে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নতুন সমস্যা জমির ভাগাভাগি

প্রথম আলো ফাইল ছবি।
প্রথম আলো ফাইল ছবি।
  • জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) দিতে চায় ১৭ একর জমি।
  • বিসিবি চায় ৩০ একর জমি।
  • এ নিয়েই নতুন করে শুরু হয়েছে টানাহ্যাঁচড়া

ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারছে না জমি ভাগাভাগির জটিলতায়। স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) দিতে চায় ১৭ একর জমি। কিন্তু বিসিবি চায় ৩০ একর জমি। এ নিয়েই নতুন করে শুরু হয়েছে টানাহ্যাঁচড়া।
পূর্বাচলে ১ নম্বর সেক্টরে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জমির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় চিঠি দিয়ে বিসিবি ও ক্রীড়া পরিষদকে একত্রে বসে আলোচনা করতে বলেছে। কিন্তু প্রায় এক মাস হতে চলল, বিসিবি ও ক্রীড়া পরিষদের মধ্যে এটি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
পূর্বাচলে ৩৭ দশমিক ৪৯ একর জমিতে স্টেডিয়াম রাজউক নির্মাণ করবে নাকি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ—এ নিয়ে এক দফা টানাটানির পর সরে দাঁড়ায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যখন নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায়, তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে নিজেদের মতো করে স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাব দেয় বিসিবি। এ নিয়ে আবার শুরু হয় দড়ি-টানাটানি। অবশেষে গত বছর ৩০ অক্টোবর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে ঠিক হয়, বিসিবি নিজস্ব অর্থায়নে করবে ক্রিকেট স্টেডিয়াম আর ক্রীড়া পরিষদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম ছাড়া ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করবে।
বিসিবি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য যে সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে, তাতে ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও ক্রিকেট একাডেমির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ১৭ একর জমি। বাকি ২০ দশমিক ৪৯ একর জমি বরাদ্দ রাখা হয়েছে স্টেডিয়াম ছাড়া ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অন্যান্য অবকাঠামোর জন্য, যেমন সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম ইত্যাদি। এগুলো নির্মাণ করবে ক্রীড়া পরিষদ। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আধুনিক ক্রিকেট কমপ্লেক্সের জন্য ১৭ একর জমি কম নয়। বাংলাদেশের বর্তমান ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট কমপ্লেক্সই গড়ে উঠেছে ১৭ একর জমিতে।
গত রোববার বিসিবির গুরুত্বপূর্ণ এক পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, আধুনিক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে গেলে কমপক্ষে ৩০ একর জমি লাগবে। এই পরিমাণ জমি না দেওয়া হলে বিসিবি স্টেডিয়াম নির্মাণ করবে না। তিনি আরও যোগ করেন, ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে বাংলাদেশে কোনো ক্রীড়া অবকাঠামো নেই বলেই বিসিবি দ্রুতই শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে চায়।
এ ব্যাপারে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষের অবস্থান যা-ই হোক না কেন, প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তারা সেটি মেনে নিয়েই দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।
শেখ হাসিনার নামে অবশ্য আরেকটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনাও এগিয়ে চলেছে। সেটি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায়। প্রস্তাবিত জায়গাটি পদ্মাতীরবর্তী এবং নদীভাঙনপ্রবণ এলাকায় বলে সেখানে স্টেডিয়াম নির্মাণ ঠিক হবে কি না, সে ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে।
গত ৩১ জানুয়ারি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নির্মীয়মাণ এই দুটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান চলতি অর্থবছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুনের আগেই সংশ্লিষ্টদের পূর্বাচল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান জানিয়েছেন, মানিকগঞ্জে ৩০-৩৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম নির্মাণে ওয়াটার মডেলিং ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে রাজউক সূত্র জানিয়েছে, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে ৩৭ দশমিক ৪৯ একর জমি বরাদ্দের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জমির মালিক হয়ে গেছে। জমির অর্থ পরিশোধ করা হলেই চূড়ান্ত বরাদ্দ দেওয়া হবে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রথম কিস্তির টাকা দিয়ে প্রাথমিক বরাদ্দপত্রই এখনো নেয়নি। কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকা হিসাবে শুধু জমির দামই পড়ে ২২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকার বেশি।
প্রসঙ্গত, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মহাপরিকল্পনাতেই একটি জাতীয় ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জন্য ৩৭ দশমিক ৪৯ একর জমি বরাদ্দ রাখা ছিল। ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন পূর্বাচলে গড়ে তোলা হবে একটি অত্যাধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। যেটির দর্শক ধারণক্ষমতা হবে ৬০-৭০ হাজার।