বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় ঢুকে পড়লেন কাস্টমস কর্মকর্তা

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি
  • বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় অনুপ্রবেশের চর্চা নতুন নয়।
  • কাস্টমসের রাজস্ব সহায়ক কর্মকর্তা তোহরা বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় ঢুকে পড়েন।
  • তোহরাকে আটকে বিমানবন্দর থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
  • বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট তোহরাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।

ছেলেকে এগিয়ে দিতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় ঢুকে এবার আর্থিক দণ্ড পেয়েছেন কাস্টমসের রাজস্ব সহায়ক কর্মকর্তা তোহরা বেগম। তিনি অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে রয়েছেন। গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

মামিকে এগিয়ে দিতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আশিকুর রহমান উড়োজাহাজের ভেতরে ঢুকে আটকা পড়ার দুই দিনের মাথায় ওই ঘটনা ঘটল। আশিকুরকে নামিয়ে আধঘণ্টা দেরিতে বিমানটি ছেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু গতকাল বুধবার পর্যন্ত আশিকুরের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়নি পুলিশ। বিমানবন্দর–সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় এমন অনুপ্রবেশের চর্চা নতুন নয়। তাঁরা বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, অস্ট্রেলিয়াগামী ছেলেকে উড়োজাহাজে তুলে দিতে কাস্টমসের রাজস্ব সহায়ক কর্মকর্তা তোহরা বেগম গত সোমবার রাত ১০টার দিকে দুই ধাপের নিরাপত্তা পেরিয়ে বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় ঢুকে পড়েন। পরে তাঁকে কর্তব্যরত কর্মীরা আটকে বিমানবন্দর থানা–পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। পরে বিমান বন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।

বিমানবন্দরে কর্মরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) একজন কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তোহরা বেগম অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে থাকলেও তাঁর কর্তব্যকালীন পরিচয়পত্র (ডি পাস) ফেরত নেয়নি কাস্টমস। নিয়ম হলো যিনি দায়িত্বে থাকবেন না, তাঁর কাছ থেকে পাসটি ফেরত নেবে সংস্থা। কিন্তু কাস্টমস সেটি করেনি।

এপিবিএনের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ডি পাস দেখিয়েই তোহরা বেগম ৩ নম্বর গেট দিয়ে বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে পড়েন। এরপর আর কেউ তাঁকে কিছু জিজ্ঞাসাও করেননি। ছেলের চেকইন, ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর তিনি হোল্ডিং লাউঞ্জ (যেখানে বিদেশগামী যাত্রীদের উড়োজাহাজে ওঠার অপেক্ষায় বসিয়ে রাখা হয়) এলাকায় চলে যান। পরে বোর্ডিং ব্রিজে (উড়োজাহাজে ওঠার জন্য টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত সেতু) ঢোকার সময় তাঁকে আটকানো হয়। এটি নিয়ে তিনি চেঁচামেচিও করেন। পরে বেতারে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা এসে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে আনেন। এরপর তাঁকে বিমানবন্দর থানা–পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাঁর অর্থদণ্ডের বিষয়টি গত মঙ্গলবার কার্যকর করা হয়।

স্পর্শকাতর এলাকায় অনুপ্রবেশ নতুন নয়
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, আত্মীয়দের বিদায় জানাতে সরকারি চাকুরে, বিভিন্ন বাহিনীর ইউনিফর্মধারী লোকজন, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিকসহ নানা পর্যায়ের লোকজন বিভিন্ন সময়ই বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় ঢোকার অনুরোধ করেন। তবে কেউ এসআই আশিকুরের মতো এভাবে উড়োজাহাজে চড়ে বসেন না।

শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম প্রথম আলোকে বলেন, অনেক চেষ্টার পর যখন যুক্তরাজ্যের কার্গো নিষেধাজ্ঞা উঠল, তখন এ ধরনের ঘটনা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।