বাবলি কেন দমে গেল?

বাবলি। ছবিটি ২০১৫ সালের। তখন সে রাজধানীর লালমাটিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
বাবলি। ছবিটি ২০১৫ সালের। তখন সে রাজধানীর লালমাটিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

শুধু মেয়ে হয়ে জন্মানোর কারণেই জন্মের ছয় মাসের মাথায় বাবলির মুখ, কান, পা ও পায়ুপথে ওষুধ খাওয়ার ড্রপারে করে পাঁচ দিন ধরে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছিলেন বাবা। তারপরও সংগ্রাম করে বেঁচে যায় বাবলি। কিন্তু গতকাল বুধবার রাতে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মিলল বাবলির লাশ।

বাবলি এবার টাঙ্গাইলের ভারতেশ্বরী হোমস থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। এ প্রতিষ্ঠানের নিয়ম না মানায় বাবলিসহ কয়েকজনকে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর সে ভারতেশ্বরী হোমসের কাছেই এক ভাড়া বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিল। ওই বাড়িতে বাবলির সঙ্গে তার এক বান্ধবী ও বান্ধবীর মা থাকতেন। গতকাল রাতে এ বাড়ি থেকেই পুলিশ ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় বাবলির লাশ উদ্ধার করেছে বলে জানান বাবলির মা।

বাবলির আর মাত্র দুটো পরীক্ষা বাকি ছিল। তারপরই ঢাকায় মায়ের কাছে চলে আসার কথা ছিল। আজ সে মায়ের সঙ্গে লাশ হয়ে ঢাকা ফিরবে।

টেলিফোনে বাবলির মা পারুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার হাসিখুশি মেয়েটা শেষ হইয়া গেল। কিয়ের লাইগ্যা এই কাজ করল আমার মেয়ে?’

পারুল জানালেন, মন খারাপ, মায়ের সঙ্গে শুধু একটু দেখা করতে চায় বলে ফোন দেয় বাবলি। পরীক্ষার জন্য আসতে নিষেধ করলেও সে মানতে চায়নি। পরে ঢাকায় আসে।

পারুল বলেন, ‘মেয়ে আইসাই বলে, মা, আমারে একটু বুকে নাও। তারপর বুকেই ঘুমাইলো। বলছিলাম, ২৪ তারিখেই মেয়েরে ঢাকায় নিয়া আসমু। আমার পারলারে মেয়েটা কী সুন্দর কইরা সাজল। তারপর টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ফিরা গিয়াই মেয়ে এই কাজ করল।’

বাড়িভাড়ার টাকা দিলেও বাবলির খাবারের জন্য এককালীন কোনো টাকা দিতেন না পারুল। বান্ধবী ও তার মায়ের সঙ্গেই খেত। যখন পারুল যেতেন, একসঙ্গে অনেক খাবার নিয়ে যেতেন। বান্ধবীর মা খাবার নিয়ে বাবলিকে খোটা দিতেন—এ নিয়ে বাবলি প্রায় সময় অভিযোগ করত বলে উল্লেখ করেন পারুল।

বাবলি ও তার মায়ের সংগ্রামে পাশে দাঁড়িয়েছিল অ্যাসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশন। বাবলির কয়েক দফায় অস্ত্রোপচারসহ পুরো চিকিৎসা, নিয়মিত শিক্ষা বৃত্তি এবং ঢাকায় মায়ের পারলার ব্যবসার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেয় সংস্থাটি। পারলার ব্যবসা মাত্র জমতে শুরু করেছিল, এখন মা ও মেয়ে একটু সুখের মুখ দেখবে বলে সবাই মনে করলেও বাবলি সব শেষ করে দিল বলে আক্ষেপ করেন অ্যাসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সেলিনা আহমেদ।

আমাদের মির্জাপুর প্রতিনিধি মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুল হকের সঙ্গে কথা বলে জানান, বাবলির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। 

২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর প্রথম আলোর অনলাইনে বাবলীকে নিয়ে ‘অ্যাসিড দমাতে পারেনি “মেয়ে” বাবলিকে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এখন সবার প্রশ্ন, বাবলি কেন দমে গেল?