'চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কিছু নেই'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কিছু নেই। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা শুধু দেশের উন্নয়নের জন্য।

গত মঙ্গলবার সরকারি বাসভবনে ভারতীয় সাংবাদিকদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত গণমাধ্যম সংলাপে অংশ নিতে কলকাতা ও নয়াদিল্লির সাংবাদিকেরা এসেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে—এমন যেকোনো দেশের সঙ্গে তাঁর সরকার সহযোগিতার হাত বাড়াতে প্রস্তুত।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি)। গত বছর এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানায়, ২০২৪ সাল নাগাদ এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে বাংলাদেশের। এটি সম্ভব হবে উন্নত স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জনের মাধ্যমে।

ভারতীয় সাংবাদিকদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব দেশ বিনিয়োগ ও সহযোগিতায় আগ্রহী, তাদের বিনিয়োগ ও সহযোগিতা আমরা চাই। আমরা দেশের উন্নয়ন চাই। আমাদের জনগণের কথা চিন্তা করতে হবে। কেননা, তাঁরাই এসব উন্নয়নের সুবিধা ভোগ করবেন।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভারত, চীন, জাপান, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসছে। ভারতের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বরং পরামর্শ দেব, ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। এতে এই অঞ্চল আরও উন্নত হতে পারে। আমরাও বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পারি যে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান। এই দেশ দুটি সমুদ্রসীমা ও স্থলসীমান্তের মতো সমস্যা সমাধানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে অতীতের মতো আমরা আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করব। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালে তাঁর শাসনামলে দুই দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তার দ্বিতীয় মেয়াদে সমুদ্রসীমা ও স্থলসীমান্ত বিষয়ে মীমাংসা হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক জোরদারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। দুই দেশের মধ্যে সেনা প্রশিক্ষণ জোরদার ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বেইজিং।

এর আগে চীন জানিয়েছিল, বাংলাদেশকে ছয়টি রেল প্রকল্প তৈরির জন্য স্বল্প সুদে ৯০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই রেল প্রকল্পগুলোর একটি ভারতীয় সীমান্তের কাছে।

নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির আশঙ্কায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনায় ভারতের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই, ভারত যেন মিয়ানমারকে তাদের বাস্তুচ্যুত মানুষদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে চাপ দেয়।’ তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ভারতসহ মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে, এমন পাঁচটি দেশের সঙ্গে আলোচনার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আশা করছেন, এই উদ্যোগ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সহায়তা করবে।

ভারতীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ষাকাল এগিয়ে আসছে। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের এ রকমভাবে (অস্থায়ী শিবিরে) রাখা বাংলাদেশের জন্য, এমনকি তাদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।