শিয়ালের কবল থেকে ফেরা শিশুটির জন্মদিন
কে তাকে ফেলে গিয়েছিল, তা জানা যায়নি। পৃথিবীতে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্নেহ-ভালোবাসার পরিবর্তে পরিত্যক্ত হতে হয়েছে। ছোট্ট দেহটির পাশে হেঁটে বেড়াচ্ছিল শিয়াল। যেকোনো সময় প্রাণটাই চলে যাওয়ার কথা। তবে কয়েকজন মানবিক মানুষের কারণে প্রাণ চলে যাওয়ার বদলে বাবা-মা পেল সেই শিশুটি। আজ ধুমধাম করে তার জন্মদিনই পালন করছে তাকে লালন-পালন করা মা-বাবা। জন্মদিনে নিমন্ত্রণ পেয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী আসন) মো. সোহরাব উদ্দিনসহ ৭০০ অতিথি।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় ময়লার স্তূপে শিয়ালের কবল থেকে উদ্ধার হওয়া কন্যাশিশু অহনার ধুমধাম করে প্রথম জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। উপজেলার পৌর সদরের শ্রীরামদী এলাকার নিঃসন্তান দম্পতি মো. আমির উদ্দিন ও সাবরিনা আক্তার সন্তানস্নেহে বড় করছেন অহনাকে। নামটিও তাঁদের দেওয়া। পুরো নাম অহনা আমির নিঝুম।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে নয়টার দিকে পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর সড়কের পাশে পাকুন্দিয়া সদর বাজারের কাছে একটি পতিত জমিতে নবজাতকটিকে কে বা কারা ফেলে যায়। শিশুর কান্নার শব্দ পান চর পাকুন্দিয়া গ্রামের হোসেন মিয়া নামের এক ব্যক্তি। কয়েকজনকে নিয়ে তিনি সামনে এগিয়ে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা জমির ময়লার স্তূপে একটি সদ্যঃপ্রসূত শিশুকে বস্ত্রহীন অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। ওই সময় শিশুটির পাশে একটি শিয়াল ঘোরাঘুরি করছিল। তাঁরা শিয়ালটিকে তাড়িয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। দীর্ঘক্ষণ খালি গায়ে মাটিতে পড়ে থাকায় ঠান্ডা বাতাসে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুটি। হাসপাতালে রেখে তিন দিন চিকিৎসার পর সে সুস্থ হয়। শিয়ালের কবল থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুটির খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে অনেক উৎসুক লোকজন ছুটে আসে।
পরে উপজেলার শ্রীরামদী গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের ছেলে আমির উদ্দিন শিশুটিকে লালন-পালন করার আগ্রহ দেখান। আমির উদ্দিন পাকুন্দিয়া বাজারের একজন মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী। ঘটনার চার দিন পর ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মিলে নিঃসন্তান দম্পতি আমির ও সাবরিনার কাছে শিশুটিকে তুলে দেন।
বাড়িতে এনে আমির উদ্দিন শিশুটির নাম রাখেন অহনা আমির নিঝুম।
আমির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি শিশুটিকে কুড়িয়ে পেলেও ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। সে জন্য আজকের দিনটিকে শিশুটির জন্মদিন হিসেবে ধরেন।
তিনি বলেন, তাঁদের দাম্পত্য জীবনের ১৬ বছর হয়ে গেছে। এত দিনেও সন্তানের মুখ দেখতে না পারায় একধরনের অতৃপ্তি ছিল। কিন্তু অহনা তাঁদের কোল ভরে দিয়েছে। তিনি শিশুটিকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করছেন। এখন অহনার ভাঙা ভাঙা স্বরে মা-বাবা ডাক শুনে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মন জুড়িয়ে যায়। অহনার সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য তাঁরা বদ্ধপরিকর। সে তাঁদের সংসারে পূর্ণতা দিয়েছে। তাই তিনি ঘটা করে তার জন্মদিন পালন করছেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর মেয়ে অহনার প্রথম জন্মদিনে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রায় ৭০০ অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।