দিনরাত ধুলায় বসবাস

রাস্তার ধুলায় ঢেকে গেছে চারপাশ। সদরঘাট–গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কের ইসলামবাগের বাগানবাড়ী এলাকার এই চিত্র গতকালের।  প্রথম আলো
রাস্তার ধুলায় ঢেকে গেছে চারপাশ। সদরঘাট–গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কের ইসলামবাগের বাগানবাড়ী এলাকার এই চিত্র গতকালের। প্রথম আলো

পাশেই বুড়িগঙ্গা নদী। অথচ প্রাণভরে শ্বাস নেওয়া তো দূরের কথা, উল্টো দূষিত পানির দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয় সদরঘাট-গাবতলী বেড়িবাঁধ সড়কের পাশের বাসিন্দাদের। কয়েক বছর ধরে যুক্ত হয়েছে নতুন এক ভোগান্তি। ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের প্রায় ৭ কিলোমিটার অংশের পিচ উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে ধুলার।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেড়িবাঁধ সড়কের সোয়ারীঘাটের কামালবাগ বটতলা মোড় থেকে হাজারীবাগ পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার অংশ ঘুরে দেখা যায়, সড়কের পিচ উঠে বের হয়ে পড়েছে মাটি। আলগা হয়ে গেছে খোয়া। সড়কের পাশের বাসাবাড়ি ও দোকানের আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়েছে রাস্তার ধারে। পথচারীরা চলছে হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে। সড়কে চলাচল করছে বাস, ট্রাক, লেগুনা, ব্যাটারিচালিত রিকশা। সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহন গেলে ধূলিধূসরিত হয়ে যাচ্ছে আশপাশের এলাকা। একসঙ্গে একাধিক গাড়ি চললে ধুলায় একরকম অন্ধকার হয়ে যায় সড়কের ওই অংশ।

গতকাল সকালে বেড়িবাঁধ সড়কের কেল্লার মোড় অংশে দেখা যায়, ধুলা থেকে বাঁচতে যানবাহনের যাত্রীদের কেউ মাস্ক পরেছেন, কেউবা হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে রেখেছেন। সড়কের পাশের চা-দোকানিরা কাপড় দিয়ে খাবার ঢেকে রেখেছেন। ধুলা জমে বিবর্ণ হয়ে গেছে সড়কের আশপাশের গাছের পাতা।

সড়কের এই অংশে কথা হয় লেগুনার যাত্রী মাসুদা খাতুনের সঙ্গে। গাবতলীগামী এই যাত্রী বলেন, ‘সকালে ভালো কাপড় পরে বাইরে বের হলে পরের দিনই সেটা পরা যায় না। বাচ্চাদের স্কুল ড্রেস প্রতিদিনই ধুয়ে দিতে হয়।’

বেড়িবাঁধের কামালবাগ বটতলা মোড়ের বাসস্ট্যান্ডে বাহন পরিবহনের চালক মোতালেব হোসেন বলেন, প্রতিদিন এ সড়কে বাস চালাতে হয়। এত ধুলা ওড়ে যে মাঝেমধ্যে নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। গলা ব্যথা করে, নাক-বুক জ্বলে।

সড়কের ইসলামবাগ বাগানবাড়ি এলাকায় পাঁচ বছর ধরে চায়ের দোকান চালান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, সড়ক তৈরির কয়েক বছর পর থেকেই নষ্ট হতে শুরু করে। বৃষ্টিতে কাদা-পানি জমে। আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলা। এখন দোকান ঝাড়ু দিলে অন্তত দুই কেজি ধুলা বের হবে।

বালুঘাটের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, দিনে তো নয়ই, রাতেও ঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখা যায় না। সড়ক থেকে উড়ে আসা ধুলাবালুতে ঘরের আসবাব-বিছানাপত্র ময়লা হয়ে যায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবীর বলেন, ধুলার সমস্যায় এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।

সড়কের জায়গার মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর দেখভালের দায়িত্বে আছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী ইকবাল বলেন, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে। কাজটি করছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গাবতলী ও সোয়ারীঘাট অংশে এরই মধ্যে সংস্কারকাজ শুরু হয়ে গেছে। এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। তখন আর ধুলাবালুর সমস্যা থাকবে না।