আরও ৪ নেতার বিচার শেষ পর্যায়ে

>
  • খন্দকার মোশাররফ, মির্জা আব্বাস, আবদুল্লাহ আল নোমান, এ কে এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে এসব মামলা করেছে দুদক।
  • চারটি বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলোর বিচারকাজ চলছে
  • আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন আদালত

বিএনপির আরও চার কেন্দ্রীয় নেতার দুর্নীতির মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে। তাঁরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ কে এম মোশাররফ হোসেন।

সাবেক এই চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঢাকার চারটি বিশেষ জজ আদালতে মামলাগুলোর বিচারকাজ চলছে। চারটিতেই এখন তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য-জেরা চলছে। এরপর আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন আদালত।

এর মধ্যে খন্দকার মোশাররফ, এ কে এম মোশাররফ ও আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে মামলা হয় আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। আর মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয় এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর। সব কটি মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার শাস্তি ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। খন্দকার মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর এখন অন্য নেতাদেরও মামলা ত্বরান্বিত করার চেষ্টা চলছে। তাঁদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এসব করা হচ্ছে।

সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দুদক ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে। তাতে বলা হয়, তিনি মন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি লন্ডনের একটি ব্যাংক হিসাবে ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮১ টাকা জমা রাখেন। এই মামলার বিচার শুরু হয় ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। দুদকের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন মীর আহমেদ আলী। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি হবে। এরপর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ঠিক হবে। খন্দকার মোশাররফ ও তাঁর আইনজীবী বোরহান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত খন্দকার মোশাররফ ও তাঁর স্ত্রী লন্ডনে চাকরি করতেন। বেতনের টাকা তিনি লন্ডনের শেয়ারবাজারে খাটান। তিনি কোনো টাকা পাচার করেননি।

সাবেক পূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সংগতিবিহীন ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ১৪ মে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলেই সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।

মির্জা আব্বাসের আইনজীবী আবদুর রেজাক খান বলেন, এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই মামলা করা হয়। পরে উচ্চ আদালত থেকে মামলাটির ওপর স্থগিতাদেশ ছিল। পরে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে আবার বিচার শুরু হয়। মির্জা আব্বাসের মতো সাবেক মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয় ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ওই বছরের ১৯ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা হয়। ২০০০ সালের ৩০ মে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আটজন সাক্ষীর মধ্যে সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। নোমানের আইনজীবী বোরহান উদ্দিনের দাবি, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই এ মামলা করা হয়।

সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী (২০০১-০৫) এ কে এম মোশাররফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কানাডার প্রতিষ্ঠান নাইকো রিসোর্স লিমিটেড থেকে ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি এবং কানাডা-আমেরিকা ভ্রমণের জন্য ৫ হাজার ডলার নিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১২ সালে মামলা করে দুদক। মামলায় ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

বিএনপির এই চার নেতার আইনজীবীদের দাবি, খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর এখন এই নেতাদের বিচার দ্রুত শেষ করার জোর চেষ্টা চলছে।

দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলাগুলো হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এসব মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।