সালিসের জন্য আটক যুবকের আত্মহত্যা!

পরকীয়ার জের ধরে গ্রাম্য সালিসের জন্য আটকে রাখা এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কক্ষে আটকে রাখা যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ শনিবার ভোর চারটার দিকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটেছে।
আইনি পদক্ষেপের বাইরে এভাবে গ্রাম্য সালিসের জন্য কাউকে ইউপি কার্যালয়ে আটকে রাখা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

মারা যাওয়া যুবকের নাম মিরাজুল ইসলাম (২৭)। তিনি ডুলাহাজারা ইউনিয়নের রংমহল এলাকার মৃত মো. কালুর ছেলে। বালুশ্রমিক হিসেবে মিরাজ কাজ করতেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, মিরাজ তিন বছর আগে বিয়ে করেন। তাঁর ১৪ মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। মিরাজ কয়েক দিন আগে অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামে পালিয়ে যান। গতকাল শুক্রবার তাঁর স্ত্রী তৈয়বা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম থেকে মিরাজ ও ওই মেয়েকে ধরে আনেন। মেয়েটিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং মিরাজকে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়।

ডুলাহাজারা ইউপির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, আজ (শনিবার) বিচারের দিন ধার্য করে মিরাজকে ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর কক্ষে রাখা হয়। সেখানে কম্বলের ছেঁড়া অংশ দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন মিরাজ।
এভাবে ইউপি কার্যালয়ে আটকে রাখা যায় কি না, প্রশ্ন করা হলে চেয়ারম্যান কোনো মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এভাবে সালিস করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ব্যাপারে খোঁজ নেব।’

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আইনের চোখে এভাবে সালিস করা অপরাধ। আপাতদৃষ্টিতে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলেই মনে হচ্ছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এদিকে মিরাজের ভাই মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার আকস্মিকতায় পুরো পরিবার হতবাক। গ্রামে এ ধরনের সালিস হয়ে থাকে। এটা বেআইনি কি না, সে সম্পর্কে তাঁর জানা নেই। লাশ গ্রহণের জন্য তিনি এখন হাসপাতালে রয়েছেন বলে জানান।

তরুণীর ঝুলন্ত লাশ
চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের মাইজঘোনা এলাকা থেকে আজ ভোর পাঁচটার দিকে এক তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম কুলসুম জান্নাত (২১)। বসতঘরের বিম থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্বামী শাওন কবির আরেকটি বিয়ে করেছেন। কুলসুমকে এ নিয়ে তিনি মারধরও করতেন। এ কারণে অপমানে ক্ষোভে কুলসুম আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তবে কুলসুমের পরিবারের দাবি, স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজন কুলসুমকে হত্যা করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

কুলসুমের মা নুরুন্নাহার বেগম জানান, কুলসুম গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার সময় তাঁকে ফোন করেন। মাকে তিনি কিছু বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেউ একজন ফোনটি কেড়ে নেয়। ফলে তাঁর সঙ্গে আর কথা হয়নি। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ের স্বামী আরেকটি বিয়ে করেননি। তবে এক নারীর সঙ্গে তাঁর পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে কুলসুম প্রতিবাদ করতেন বলে স্বামী মারধর করতেন। এ কারণেই তাঁকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে দিয়েছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কুলসুমের লাশ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, লাশ উদ্ধারের সময় বাড়িতে তরুণীর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁরা পালিয়ে গেছেন।