প্রশ্নপত্র ফাঁসে শিক্ষকদের একটি অংশ জড়িত: আনিসুজ্জামান

ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। পাংশা, রাজবাড়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি। ছবি: এজাজ আহম্মেদ
ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। পাংশা, রাজবাড়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি। ছবি: এজাজ আহম্মেদ

প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষকদের একটি অংশ জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য নিয়ে এখন অনেকে ভাবছেন না। পরীক্ষায় প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পড়ার চাপে শিশুদের শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে।

আজ শনিবার রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. আনিসুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি ড. এম এ মাজেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা, রাজবাড়ী-২ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জিল্লুল হাকিম, প্রকৌশলী এ কে এম রফিক উদ্দিন প্রমুখ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানাজালা ও ড. কাজী মোতাহার হোসেনের নাতনি অধ্যাপক নাজমা হক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষকদের একটি অংশ জড়িত। আগে আমরা এটা ভাবতেও পারতাম না। এখন পরীক্ষায় প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়াটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। শিক্ষার যেই মূল উদ্দেশ্য—জ্ঞান আহরণ করা, প্রকৃত ভালো মানুষ হওয়া, সেটা অনেকেই এখন চিন্তা করছে না। এ কারণেই প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা ঘটছে।’

আনিসুজ্জামান বলেন, ‘এখন আর কেউ শিক্ষার্থী হতে চায় না, সবাই পরীক্ষার্থী হতে চায়। কোনো বিষয়ে জানার আগ্রহের চেয়ে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করাই লক্ষ্য। আমরা জিপিএ–৫ নিয়ে মাতামাতি করছি। শিশুরা বিদ্যালয় থেকে এসে আবার ছুটছে কোচিং সেন্টারে বা স্যারের বাসায়। এতে তাদের জীবন থেকে আনন্দ হারিয়ে যাচ্ছে, শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে।’

ড. কাজী মোতাহার হোসেনকে উদ্ধৃত করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘তিনি (কাজী মোতাহার হোসেন) ভাষার প্রশ্নে বলেছিলেন, উর্দুকে যদি জোর করে পূর্ব বাংলার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে পূর্ব–পশ্চিমের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে। এটি এত সহজভাবে শুধু তাঁর পক্ষেই বলা সম্ভব ছিল। তিনি আরও বলতেন, জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব। সবকিছু আমাদের যুক্তি দিয়ে মানতে হবে। তাহলেই সমাজ সামনের দিকে অগ্রসর হবে।’

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা বলেন, ‘দেশ দ্বারা মানুষ পরিচিত হয় না, মানুষ দ্বারাই দেশ পরিচিত হয়। যে দেশের মানুষ যত উন্নত, সেই দেশ তত উন্নত। আমাদের চিন্তা, চেতনা, সংস্কৃতিতে উন্নত হতে হবে। আমাদের শুধু আদর্শের কথা মুখে বললে হবে না। আমাদের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।’