সরাইলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সমাবেশ। ছবি: প্রথম আলো
১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সমাবেশ। ছবি: প্রথম আলো

১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় ছাত্রলীগের এক পক্ষ সমাবেশ করেছে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আজ শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। 

উপজেলা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের (আহ্বায়ক কমিটি এবং আহ্বায়ক কমিটির বিরোধিতাকারী পক্ষ) সমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত উপজেলা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল উপজেলা প্রশাসন। তবে আজ বিকেলে আহ্বায়ক কমিটি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সমাবেশ করলে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ পাঁচ বছর পর গত ৩১ জানুয়ারি জেলা ছাত্রলীগ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের জসিম খানকে (৩০) আহ্বায়ক, আশরাফ উদ্দিন, শরিফ উদ্দিন, সরদার কার্নিস সুলতানা, ইমতিয়াজ আহমদসহ ১৪ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৩৪ জনকে সদস্য করে ৪৯ জনের উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে সানাউল্লাহ গিয়াস উদ্দিন (৩৩ বছর বয়সী ও বিবাহিত) ও ইমতিয়াজ আহমদের নেতৃত্বাধীন অপর একটি পক্ষ।

গত বৃহস্পতিবার আহ্বায়ক কমিটি আজ উপজেলায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পরিচিতি সভা ও আনন্দ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন একই স্থানে সমাবেশের ডাক দেয় বিরোধী পক্ষ।

আজ বেলা তিনটা থেকে আহ্বায়ক কমিটির নেতা-কর্মীরা উপজেলা সদরের বড্ডাপাড়ায় রাহমাতুল লিল আলামিন দাখিল মাদ্রাসার মাঠে জড়ো হতে থাকেন। পরে কয়েক শ নেতা-কর্মী উপজেলা সদর হাসপাতাল মোড় ও বৈকাল বাজার হয়ে শহীদ মিনারের দিকে অগ্রসর হন।
এই মিছিল নিজসরাইল এলাকায় পৌঁছালে বিরোধীপক্ষের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে প্রবীণ শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের বসতবাড়ির কাচ ভেঙে যায়। লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে অরুয়াইল সড়কের হাসপাতাল মোড় থেকে বৈকাল বাজার পর্যন্ত সড়কের কয়েক শ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।

আহ্বায়ক জসিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগ আমাদের কমিটি ঘোষণা করেছে। আমরা বৈধ। উপজেলা যুবলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ আংশিক কমিটির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক শের আলম মিয়া ষড়যন্ত্র করে পদবঞ্চিত কয়েকজনকে ব্যবহার করে ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।’

১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের মিছিল। ছবি: প্রথম আলো
১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের মিছিল। ছবি: প্রথম আলো

এ প্রসঙ্গে শের আলম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন। ছাত্রলীগের বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই। তবে আমরা চাই ছাত্রলীগ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান থাকুক।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী হাকিম উম্মে ইসরাত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে জানান, ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজ উদ্দিন ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ওই আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে আজ বিকেলে একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল আমীন হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।