উচ্চ আদালতের রায় বাংলায় লেখা হলে ভোগান্তি কমবে: প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উচ্চ আদালতের রায়টা ইংরেজিতে লেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক সাধারণ মানুষ আছেন যাঁরা ইংরেজি জানেন না। তাই রায় পড়ে আইনজীবীরা যা বোঝান, সেটাই তাঁকে বুঝতে হয়। তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতে ইংরেজিতে রায় লেখাটা দীর্ঘদিনের একটি পদ্ধতি। চট করেই এটার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবু আমরা আশা করি, ধীরে ধীরে এটাও চালু হবে, কারণ বিচারপ্রত্যাশী সাধারণ জনগণকে রায়টা তো পড়ে বুঝতে হবে।’ উচ্চ আদালতের রায় লেখার ক্ষেত্রেও বাংলার ব্যবহার শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে করে বিচারপ্রত্যাশীদের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হবে।

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘(রায়) পড়ে সেটা ইংরেজিতে অনুবাদ হোক। আমরা ইংরেজির বিপক্ষে নই, তবে সেই চর্চাটা বাংলায় থাকা উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতি কোনো দিনও তাদের ক্ষমা করবে না। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী যাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচার হয়ে সাজা হয়েছে, সাজা কার্যকর হয়েছে, তাদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছিল এবং লাখো শহীদের রক্তরঞ্জিত জাতীয় পতাকা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল, জাতি যেন কোনো দিন তাদের ক্ষমা না করে। সেটাই আমার জাতির কাছে আবেদন।’ তিনি বলেন, ‘যারা আমার মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ-লুটপাট করেছে—সেসব যুদ্ধাপরাধীদের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তাদের বিচারের রায় আমরা কার্যকর করেছি। যারা এদের মর্যাদা দিয়েছিল, এদের হাতে পতাকা তুলেছিল, তাদের ব্যাপারে জাতিকে সচেতন থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮-এর নির্বাচনে তাঁর দল জয়ী হয়েছে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের জয় অগ্নিসন্ত্রাস করেও বিএনপি-জামায়াত ঠেকাতে পারেনি। এই দীর্ঘ ৯ বছর সরকারে থাকার ফলেই অন্তত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে মানুষ গর্ববোধ করে। আর ভীত সন্ত্রস্ত হয় না।

সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল মতিন খসরু, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন বক্তব্য দেন। প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ আলোচনা সভা পরিচালনা করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের সভাপতিমণ্ডলী এবং কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
‘ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, সেই ভাষার চর্চাটা আমাদের থাকতে হবে। সেটা পরিবার থেকেও উৎসাহিত করতে হবে।’ দেশে বাংলা ভাষা শিক্ষায় এক ধরনের অনীহা থাকার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রচুর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা শিক্ষা এবং সাহিত্যচর্চার কোনো ব্যবস্থা থাকবে না, এটা কেমন কথা।

বিয়ের কার্ড, সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড বাংলা ভাষায় না লেখার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা মনে হয় যেন একটা ব্যাধির মতো ছড়িয়ে গেছে। এই দৈন্য কেন থাকবে, আমি বুঝতে পারি না।’ অন্য ভাষা শিক্ষার বিপক্ষে তিনি নন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বিশ্বটা কিন্তু এক হয়ে গেছে, সে জন্য বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে গেলে অন্য ভাষা আমাদের শিখতেই হবে। যে যত ভাষা শিখতে পারবে, তার মেধার ততটা উৎকর্ষ সাধিত হবে।’ তবে অন্য ভাষা শিখতে না পারলে দেশ যে উন্নত হতে পারবে না, সেটা তিনি বিশ্বাস করেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইংরেজি আমরা শিখব আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে যে ভাষার জন্য ভাষাসৈনিকেরা জীবন দিয়ে গেছেন সেটা আমরা কেন শিখব না, সেটার চর্চা আমরা কেন করব না। সেটাই হচ্ছে মূল কথা।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতা হত্যার পর ’৭৫ থেকে ’৮১ সাল পর্যন্ত দেশে ফিরতে না পারার কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁর এবং শেখ রেহানার সন্তানেরা বিদেশে পড়ালেখা করতে বাধ্য হলেও তাঁরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন, তাঁদের সন্তানেরা যেন বাংলাটা চর্চা করতে পারে। যেটি দেশে থেকেও অনেকে পারছেন না বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন মাতৃভাষা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ভাষা জাদুঘরও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাসমূহকে সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশের ওপরই আজকে দায়িত্ব পড়েছে।