নির্মম! বর্বর! অমানবিক!

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কবির হোসেন (৪৫)। ঘরের মধ্যে আটকা ছিলেন। গত বুধবার কোনো এক সময় লুকিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যান। গতকাল শুক্রবার মিলেছে লাশ। স্থানীয় লোকজন বলছেন, কবিরকে চোর ভেবে ভুল করেছে লোকজন। তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা।

কবির হোসেন ঝিনাইদহ সদরের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে। গতকাল সকালে মাগুরার সাঁইত্রিশ এলাকায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়।

কবির হোসেনের ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, তাঁর ভাই আগে স্বাভাবিক মানুষ ছিলেন। ২০০১ সালের দিকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। নানাভাবে চিকিৎসা দিয়েও তাঁকে সুস্থ করা যায়নি। একপর্যায়ে শৈলকুপার পদ্মনগর গ্রামের ফুটফুটি খাতুনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেন। সংসার শুরুর পর কবির কিছুটা সুস্থ হন। কিন্তু স্ত্রী ফুটফুটি একটা সময় তাঁকে ছেড়ে চলে যান। এরপর কবির আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় তাঁকে বেশির ভাগ সময়ই ঘরের ভেতরে আটকে রাখা হতো।

বুধবার কোনো এক সময় কবির ওই ঘর থেকে বের হয়ে যান। পরিবারের সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু কোনো সন্ধান মেলেনি। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পরিবার খবর পায়, মাগুরার সাঁইত্রিশ এলাকায় একটি লাশ পাওয়া গেছে। হাবিবুরসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা কবিরের ক্ষতবিক্ষত লাশ শনাক্ত করেন।

হাবিবুর রহমান বলেন, কবিরকে চোর সন্দেহ করে হত্যা করা হয়। এলাকার লোকজন বিষয়টি তাঁকে বলেছেন। লাশ ফেলে রাখা হয় পথের ধারে। লাশের শরীরে পিটুনির পাশাপাশি ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তাঁকে চরম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। চোরকেও কেউ এভাবে মারতে পারে না। হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘তা ছাড়া কবির যে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তা দেখলেই বোঝা যেত। কেন তাঁকে এভাবে মারা হলো? আমরা এই ঘটনার উপযুক্ত
বিচার চাই।’

মাগুরার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় লাশ দাফন হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা হয়েছে। হাবিবুর রহমানও থানায় পৃথক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন বলেন, লাশের শরীরে এলোমেলো মারপিটের দাগ রয়েছে। তবে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে কি না, তা বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশ খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা হয়েছে। কবিরের পরিবার মামলা দিতে চাইলে সেটিও নেওয়া হবে।

কবিরের বৃদ্ধ মা সালেহা এ ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁর কান্না থামছেই না। যাকে পাচ্ছেন, তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন আর বলছেন, ‘আমার অসুস্থ ছেলেকে যারা মেরে ফেলল, আমি তাদের বিচার চাই।’

পরিবারটির প্রতিবেশী স্থানীয় পোড়াহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার বাড়ির পাশেই কবিরদের বাড়ি। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় মাঝেমধ্যেই নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন। আবার আপনাআপনিই বাড়িতে ফিরতেন। এবার ফিরলেন লাশ হয়ে। একজন প্রতিবন্ধীকে যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা বর্বরতার চরম নিদর্শন হয়ে থাকল।