সীমানাখুঁটিতে গচ্চা ২৮ কোটি টাকা

নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সীমানাখুঁটির হাল। সম্প্রতি তোলা ছবি।  হাসান রাজা
নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সীমানাখুঁটির হাল। সম্প্রতি তোলা ছবি। হাসান রাজা

ঢাকার চার নদীর তীরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ করে ৯ হাজার সীমানাখুঁটি বসানো হবে। পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে ২৮ কোটি টাকা খরচ করে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার সীমানাখুঁটি বসানো হয়েছিল। সেগুলোর অর্ধেকের বেশি চুরি হয়ে বা ভেঙে গেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত যে খুঁটিগুলো বসানো হয়েছিল, রক্ষণাবেক্ষণ এবং তদারকির অভাবে সেগুলোর দুর্দশা। এবার ২০০ কোটি টাকা খরচ করে নতুন যেসব খুঁটি বসানো হবে, সেগুলো পাহারার জন্যও পর্যাপ্ত লোকবল এখন পর্যন্ত নেই। এ ছাড়া আগের খুঁটিগুলো নিম্নমানের সিমেন্ট-বালু দিয়ে তৈরির অভিযোগ রয়েছে। খুঁটির গভীরতাও কম ছিল। আগের খুঁটিগুলোর প্রতিটিতে খরচ হয়েছিল ২০ হাজার টাকা। এবার পড়বে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা।

চার নদীর তীরে আগের মোট সংখ্যা ৭ হাজার ৩৮৪ খুঁটি বসানোর ক্ষেত্র তৈরি করেছিল জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু বাস্তবায়ন করেছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, এবার ৯ হাজার সীমানাখুঁটি বসানোর দায়িত্ব সরাসরি বিআইডব্লিউটিএ নিচ্ছে। তাই মান ও অন্যান্য বিষয়ে বাড়তি নজরদারি থাকবে। আগে ভুল জায়গায় খুঁটি বসানো হলেও এবার বসানো হবে সঠিক জায়গায়।

জানা যায়, আগেরবার খুঁটি বসানোর সময় সীমানা নির্ধারণ করা হয় সিএস (ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে) জরিপের পরিবর্তে আরএস জরিপের (রিভাইসড সার্ভে) ভিত্তিতে। অথচ হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ২৫ জুন নির্দেশ দিয়েছিল সিএস অনুসারে নদীর তীর দখলমুক্ত করতে। হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল নদীর ঢালের ১৫০ ফুট দূরে সীমানাখুঁটি বসাতে হবে। কিন্তু তা অনুসরণ করা হয়নি।

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভূমি) নজরুল আলম বলেন, বর্ষাকালে নদীর প্রবাহ যত দূর প্রশস্ত থাকে, তত দূর পর্যন্তই নদীর জায়গা। শুকনা মৌসুমের প্রবাহ ধর্তব্য নয়। জেলা প্রশাসনের মানচিত্র সঠিকই ছিল। কিন্তু খুঁটি বসানোর সময় তা পরিবর্তন হতে পারে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খুঁটি বসানোর সময় বিআইডব্লিউটিএ এবং জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা সার্বক্ষণিকভাবে ছিলেন না। এ ছাড়া এসব খুঁটি রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়মিত তদারকির বাইরে ছিল। ২০১৪ সালে সিন্নিরটেকে তুরাগ নদে খননকাজ করতে গিয়ে বিআইডব্লিউটিএ নিজেরাই প্রায় ২০০ সীমানাখুঁটি নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

বিআইডব্লিউটিএর নথি ও মাঠকর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বসানো খুঁটিগুলোর চার ভাগের এক ভাগও এখন দৃশ্যমান নেই। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, কিছু খুঁটি ভেঙে আছে, নয়তো এক দিকে হেলে আছে।

তুরাগ নদের তীরে টঙ্গী প্রান্তে ৮০০ এবং গাবতলী-মিরপুর প্রান্তে ১ হাজার ২০০ খুঁটি বসানো হয়েছিল। টঙ্গী অংশের শতাধিক শিল্পকারখানার বেশির ভাগের পাশে সীমানাখুঁটি অস্তিত্বহীন।

বিআইডব্লিউটিএর হিসাবে তুরাগ নদের বেশির ভাগ তীরভূমিতেই নির্ধারিত স্থানের অনেক ভেতরে খুঁটি বসানো হয়। সেগুলোর বেশির ভাগই এখন নেই। এ ছাড়া সিন্নিরটেক ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে গোড়ান চটবাড়ি পর্যন্ত দখলদারদের বালু ভরাটের কারণে বেশির ভাগ সীমানাখুঁটি ঢেকে গেছে।

৫০ গজ দূরত্বে একটি করে সীমানাখুঁটি থাকার কথা। কিন্তু শীতলক্ষ্যা নদীর কাঁচপুর থেকে ডেমরা সুলতানা কামাল সেতু পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে মাত্র ২১টি খুঁটি দেখা যায়, অর্থাৎ খুঁটি প্রতি ১০০ গজে একটি। কিছু খুঁটি পানির কাছে, কিছু তিন-চার গজ বাইরে। ডেমরার আমুলিয়া থেকে পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা বেরাইদ, সাঁতারকুল, দাশেরকান্দি, উত্তরখান এলাকায় বালু নদের তীরের অনেক খুঁটি ২০১৪ সালের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায় বলে বিআইডব্লিউটিএর মাঠকর্মীরা জানান।