প্রভাবশালীদের কলকাঠিতে ইউএনওর বদলি!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিরুল কায়সারের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে উপজেলাবাসী। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ছবি: শাহাদৎ হোসেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিরুল কায়সারের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে উপজেলাবাসী। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ছবি: শাহাদৎ হোসেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিরুল কায়সারের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন উপজেলাবাসী। আজ রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেন বিক্ষোভকারীরা।

জানা গেছে, ইউএনও আমিরুল কায়সারকে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কারণে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আমিরুলকে আশুগঞ্জ থেকে বদলি করতে কলকাঠি নেড়েছেন।

রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিক্ষোভকারীরা। মানববন্ধনে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ অংশ নেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা গোলচত্বর ও রেলগেট এলাকায় টায়ারে আগুন দেয় ও মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে রাস্তার দুই পাশে প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুর ১২টার পর যান চলাচল শুরু হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ১২ জুন আশুগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন আমিরুল কায়সার। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) মোমিনুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে ইউএনও আমিরুলকে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় বদলি করা হয়।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিরুল কায়সার বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে বদলি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আদেশ পেয়েছি। নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে।’

রোববার প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে যাওয়ায় একটি কুচক্রী মহলের মিথ্যা অভিযোগে ইউএনওকে বদলি করা হয়েছে। ইউএনওর বদলির আদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করা না হলে উপজেলায় হরতালসহ আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। তাঁরা আরও বলেন, ইউএনওর বদলি প্রত্যাহার করা না হলে সোমবার সকাল থেকে উপজেলার কোনো সভায় ইউপি চেয়ারম্যানরা যোগদান করবেন না।

সাতজন ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে আড়াইসিধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া বলেন, উপজেলার কাচারি পুকুরের পাড়ে সরকারি জায়গায় দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খানসহ কয়েকজনের ভবন পড়েছে। গত বছরের ১৫ জুলাই অবৈধ ভবন ভাঙতে গেলে জিয়াউল করিম ইউএনওকে বাধা দেন।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউল করিম খান ছাড়াও জেলা ধান-চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন ভূঁইয়া, বিএনপি নেতা আব্বাস উদ্দিন খান, ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম, আবুল খায়ের ও আবুল হোসেনের ভবন রয়েছে সরকারি জায়গায়। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করতে পারেননি ইউএনও।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইউএনওর বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করে বিক্ষোভকারীরা। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ছবি: শাহাদৎ হোসেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইউএনওর বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করে বিক্ষোভকারীরা। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ছবি: শাহাদৎ হোসেন

সরকারি জায়গায় ভবন থাকার কথা স্বীকার করে দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ইউএনওকে কোনো হুমকি দিইনি। উচ্চ আদালতের স্থিতি অবস্থার কারণে ভবন উচ্ছেদের আদেশ স্থগিত রয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) রেজওয়ানুর রহমান বলেন, প্রশাসনিক কারণে আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউএনওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। কোনো দূরত্ব নেই। সরকারি জায়গায় উচ্ছেদ করতে গিয়ে ইউএনও কারও বদ নজরে পড়েছেন বলে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে শুনেছি।’