শওকত আলী ছিলেন অবহেলিত ও উপেক্ষিত

প্রদোষে প্রাকৃতজন-খ্যাত কথাসাহিত্যিক শওকত আলী বরাবরই সমাজের অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের কথা তুলে এনেছেন তার রচনায়। কিন্তু সৃজনশীল এই লেখক নিজেও ছিলেন অবহেলিত। শওকত আলী যাদের জন্য শিল্পকর্ম রচনা করতেন তারা যেমন তাকে চিনতেন না, তেমনি যারা তাকে চিনতেন বা জানতেন তারা সেই মর্যাদা দিতে পারেননি এই গদ্যশিল্পীকে। উপেক্ষিত হওয়ার বেদনা নিয়েই শেষ পর্যন্ত এই সাহিত্যিক চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে দিনাজপুর সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সমিতির আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন এই সভায় সভাপতিত্ব করেন।

স্মরণ সভায় প্রবন্ধ পাঠ করতে গিয়ে কবি ও সাহিত্যিক মোস্তফা আহমদ বলেন, ভাবনায় ও তা প্রকাশের ভাষায় যত খানি মৌলিক হলে শওকত আলীকে একেবারেই আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়, তিনি ততখানিই স্বতন্ত্র। দ্বিধাহীনভাবে চরিত্র নির্মাণ ও সমাজ ব্যবচ্ছেদে অনন্য। তিনি শির উঁচু এক প্রাজ্ঞজন, যিনি অবহেলিত মানুষের মুখশ্রী এঁকেছেন এবং একই সঙ্গে আপন স্বার্থ চিন্তা এ কুট ঘৃণ্যতায় যুক্ত রাজনীতির বীভৎসতা থেকে মুক্তি আকাঙ্ক্ষা করেছেন। এই কথাশিল্পীর জীবনযাপনের শেষ দিনগুলোতে ভুলেও কেউ তাঁর খোঁজ করেননি বলে মোস্তফা আহমদ সবার পক্ষ থেকে ক্ষমা চান।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘একজন পাঠক ও তার একজন গুনগ্রাহী হিসেবে আমার মনে হয়েছে, এমন একজন মানুষ চলে গেলেন কিন্তু তাকে নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা সভা বা স্মরণ সভা হয়েছে বলে শুনিনি। এত বড় মাপের একজন লেখক হয়েও তিনি ছিলেন নিভৃতচারী। শওকত আলী যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন তিনি গণমানুষের কথা বলে গেছেন। কিন্তু তাকে এভাবে উপেক্ষা করা ঠিক হয়নি। এসব দুঃখবোধ নিয়েই চলে গেছেন তিনি।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার চেনা জানা ছিল না। তবে এত বড় একজন সাহিত্যিককে কেন জানলাম না, কেন তাকে ওইভাবে আমরা চিনতে পারলাম তা অনুধাবন করে দুঃখ হচ্ছে। তাই জীবদ্দশায় না হোক এখন তাকে ভালো করে জানতে চাই। তার সাহিত্য পাঠ করে তাকে আরও ভালো করে চেনার চেষ্টা করব।’

নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘শওকত আলী মূলধারার লেখক হলেও আজীবন তাঁকে মূল্যায়নে অবমাননা করা হয়েছে, তেমনি তাঁর মৃত্যুর পরও তার প্রতি অবহেলা করা হয়েছে। তিনি একটি উপন্যাস সৃষ্টি করতে একটি ভাষা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু শওকত আলীকে চেনাতে গণমাধ্যম কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাই আমি মনে করি মৃত্যুর পর হলেও এখন তার সাহিত্যগুলো পুনর্মূল্যায়ন হওয়া দরকার।’