চাই নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ

গোলটেবিল বৈঠকে গতকাল বক্তব্য দেন মেহের আফরোজ। পাশে নাসের ​এজাজ।  প্রথম আলো
গোলটেবিল বৈঠকে গতকাল বক্তব্য দেন মেহের আফরোজ। পাশে নাসের ​এজাজ। প্রথম আলো

নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের আইন ও নীতির কমতি নেই। তবে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। আর নারীর ক্ষমতায়নে নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পাশাপাশি নারীদেরও অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।

গতকাল রোববার প্রথম আলো আয়োজিত ‘সর্বত্র নারীর আরও উন্নয়ন ও অংশগ্রহণ চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আলোচকেরা এসব কথা বলেছেন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহায়তায় এই গোলটেবিল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকের আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন বলেন, নারীর উন্নয়নে অগ্রগতির চিত্র দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে নজর বাড়াতে হবে। নিয়মিত বেতনে চাকরির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে সমতা আসেনি। বিনা বেতনে কাজ করা নারীর সংখ্যা অনেক বেশি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন আরা বেগম বলেন, এখন পর্যন্ত মেয়েকে সন্তান হিসেবে ভাবার মানসিকতা গড়ে ওঠেনি। কর্মজীবী নারীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পাচ্ছেন, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই ছুটিকে প্রয়োজন হিসেবে না দেখে বাড়তি সুবিধা হিসেবে দেখা হয়।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল—ইউনিসেফের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট শাবনাজ জাহেরীন বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে নির্বাচিত নারী সদস্যদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এই পদগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আলংকারিক পদ। তাই অংশগ্রহণের পাশাপাশি কর্মপরিবেশটাও জরুরি।

শাবনাজ জাহেরীনের মতে, বাল্যবিবাহ এবং যৌতুক বন্ধ করা সম্ভব না হলে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। নারীর ক্ষমতায়নে রাষ্ট্রীয় সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিক সহায়তার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেন তিনি।

ইউসেপ বাংলাদেশের চিফ প্রোগ্রাম অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষিত নারীরা সন্তান, পরিবারের কথা চিন্তা করে নিজের ‘ক্যারিয়ার’ নিয়ে ভাবতে পারছেন না। এই নারীদের সহায়তায় সরকারকে নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

হাবিবুর রহমান জানান, ইউসেপের ৫৪টি স্কুলে ৫৪ ভাগ শিক্ষার্থী মেয়ে এবং কারিগরি শিক্ষায় ৪৬ ভাগই নারী। এই নারীরা সমাজে প্রান্তিক নারী হিসেবে পরিচিত।

অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ্বাস বলেন, ছেলেশিশুদের ছোটবেলা থেকেই নারীদের সম্মান দেখানো শেখাতে হবে। কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি নারীর ঘরের দায়িত্ব পালনে পুরুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন তিনি।

বাংলাদেশ নারী দলের ক্যাপ্টেন সাবিনা খাতুন বলেন, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে জানালেন, তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে বিদেশের কোনো ক্লাবে খেলছেন।

আলোকচিত্রী এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে বলেন, যন্ত্রণা যেহেতু আমার, কথাও বলতে হবে আমাকেই।