জাতীয় গণিত উৎসবের উদ্বোধন

ষোড়শ ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১৮-এর উদ্বোধন হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল নয়টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আসাদগেট এলাকায় সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে রঙিন বেলুন উড়িয়ে ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। কাল শনিবার দুদিনের উৎসব শেষ হবে।

জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার সুব্রত লিও রোজারিও। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন।

এ বছর সারা দেশে মোট ৩৫টি আঞ্চলিক গণিত উৎসব হয়, যাতে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে বাছাই করা ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী আজ এ উৎসবে অংশ নিচ্ছে। উদ্বোধনের পর প্রাইমারি স্তরে দুই ঘণ্টা, জুনিয়র স্তরে তিন ঘণ্টা, সেকেন্ড ও হায়ার সেকেন্ডারি স্তরের চার ঘণ্টার পরীক্ষা চলছে।

রঙিন বেলুন উড়িয়ে ষোড়শ ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১৮-এর উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। ৯ মার্চ, ২০১৮। ছবি: আশরাফুল আলম
রঙিন বেলুন উড়িয়ে ষোড়শ ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০১৮-এর উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। ৯ মার্চ, ২০১৮। ছবি: আশরাফুল আলম

গণিত উৎসবের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করে লিও রোজারিও বলেন, এ গণিত অলিম্পিয়াড বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার একটি প্রয়াস।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘খুদে গণিতবিদদের অভিনন্দন। এবার সবচেয়ে বেশি অঞ্চলে গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ এর আগে ছয়টি রোপ্য ও ২৪টি ব্রোঞ্জ এনেছে। গত বছর বাংলাদেশ ১১১টি দেশের মধ্যে ২৬তম ছিল। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ভারত, শ্রীলঙ্কা, কানাডা ও জার্মানির চেয়ে গত বছর বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। এসবই প্রমাণ করে কিশোর–কিশোরীদের অগ্রযাত্রা। বিশ্বের মধ্যে এত বড় করে উৎসব বাংলাদেশেই হয়। আমরা দেখতে চাই, বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রেই যেন বিজয়ী হয়।’

জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন। ৯ মার্চ, ২০১৮। ছবি: আশরাফুল আলম
জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন। ৯ মার্চ, ২০১৮। ছবি: আশরাফুল আলম

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সহসভাপতি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার নিন্দা জানান প্রথম আলোর সম্পাদক। আগামী গণিত অলিম্পিয়াডে তিনি যেন যোগ দিতে পারেন, এ আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

গণিত অলিম্পিয়াডের সভাপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়েছে, এগিয়ে যাচ্ছে। ৪৭ বছর আগে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করত, এটি দেশ হিসেবে টিকে থাকবে কি না। সেই দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে আশা করি দেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে। এ কথা বলার কারণ, অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি হলো বিজ্ঞান ও গণিত। আন্তর্জাতিক গণিত উৎসবে আমাদের দল এবারো ভালো করবে। সেরা দশে থাকবে।’

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন বলেন, ‘আজ তোমরা মেধার যোগ্যতা দিয়ে এ পর্যায়ে এসেছ। এখান থেকে যোগ্যরা রোমানিয়ায় অংশ নেবে। আমি তোমাদের হাতে স্বর্ণ দেখতে চাই।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী রেজাউর রহমান, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুনিবুর রহমান চৌধুরী, কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গণিত অলিম্পিয়াডের সভাপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী। ৯ মার্চ, ২০১৮। ছবি: আশরাফুল আলম
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গণিত অলিম্পিয়াডের সভাপতি জামিলুর রেজা চৌধুরী। ৯ মার্চ, ২০১৮। ছবি: আশরাফুল আলম

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। উৎসবে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে ওয়াটার রকেট উৎক্ষেপণ, সাইকেল স্ট্যান্ট, রুবিক কিউব প্রতিযোগিতার বাছাইপর্ব, সিসিমপুর, রম্য বিতর্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আকাশ দেখা।

অনুষ্ঠানের আয়োজনে রয়েছে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি, পৃষ্ঠপোষকতায় ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক ও ব্যবস্থাপনায় রয়েছে প্রথম আলো।