বরগুনায় ছয় শর্ত ভেঙে চলছে ইটভাটা

বরগুনার আমতলীতে ওয়াক্ফ এস্টেটের কৃষিজমি দখল করে গড়া অবৈধ ভাটায় ইট পোড়ানো চলছেই। এ ক্ষেত্রে ভাটা নির্মাণের সুনির্দিষ্ট ছয়টি শর্ত লঙ্ঘন হলেও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর নীরবতা পালন করছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, ‘জিমি ব্রিকস’ নামের ওই ভাটার মালিক আবুল বাশার ওরফে নয়ন মৃধা নামের এক ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার শ্যালক পরিচয়ে ভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।

এ নিয়ে গত বছরের ২৫ নভেম্বর প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘ওয়াক্ফ সম্পত্তি দখল করে অবৈধ ইটভাটা’ শিরোনামে খবর ছাপা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাটাটি নির্মাণ করা হয়েছে আবুল কাশেম ওয়াক্ফ এস্টেটের ফসলি জমি দখল করে। ভাটাটির পাশেই রয়েছে বিপুল আয়তনের ফসলি জমি ও জনবসতি। এ ছাড়া ভাটা নির্মাণের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও তা নেই। ভাটায় অগ্নিসংযোগের আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লিখিত অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এই ভাটার তা নেই। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও এটি নির্মাণ করা হয়েছে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের ১০ গজের কম দূরত্বে। একইভাবে ভাটায় ইট তৈরির জন্য সেকান্দারখালী এলাকায় সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে মাটি আনা হয়েছে।

পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, এ রকম গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও ভাটাটির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া দুঃখজনক। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১২ নভেম্বর ওয়াক্ফ প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বরগুনার জেলা প্রশাসককে ভাটাটি বন্ধ এবং মাটি খননকাজ বন্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন। এরপর ১৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের পক্ষে মুনশিখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার প্রয়োজনীয় প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অনুরোধ করে একটি চিঠি দেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ইউএনও মো. সরোয়ার হোসেন উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের কানুনগোকে নির্দেশ দেন। কানুনগো আহসান হক সরেজমিনে তদন্ত করে ২২ নভেম্বর ইউএনওর কাছে লিখিত প্রতিবেদন দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, আবুল কাশেম ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতোয়ালি জাহিদুল ইসলাম মৌখিকভাবে ওয়াক্ফ সম্পত্তি হস্তান্তর করেন।
কানুনগোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমতলীর ইউএনও অবৈধভাবে ওয়াক্ফ সম্পত্তি দখলকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে ২২ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর প্রায় তিন মাস পার হলেও ইটভাটাটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আরেফিন বাদল বলেন, ওই ভাটার মালিক পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার পর তা স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

জিমি ব্রিকসের মালিক আবুল বাশার মৃধা অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশ পাননি। পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়নের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন।