নির্বাচন নিয়ে এখনই আলোচনা চায় বিএনপির শরিকেরা

২০-দলীয় জোটের বৈঠক। ফাইল ছবি
২০-দলীয় জোটের বৈঠক। ফাইল ছবি

খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এখনই শুরু করতে চায় বিএনপির শরিক দলগুলো। এর অংশ হিসেবে শরিকেরা আসন সমঝোতার আলোচনা চাইছে। কিন্তু বিএনপি সাড়া দিচ্ছে না। এ নিয়ে ২০-দলীয় জোটের শরিকদের ভেতরে অস্বস্তি আছে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা বলছেন, সরকারি দল ও তাদের শরিকেরা নির্বাচনী প্রচারে নেমে গেছে। সরকার বিএনপিকে অপ্রস্তুত রেখে নির্বাচন দিয়ে দিতে পারে। তাই বিএনপিরও উচিত খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু করা। এ লক্ষ্যে শরিকদের সঙ্গে বসা, আশ্বস্ত করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শরিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া না হওয়ায় অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি সংসদীয় আসনে বিএনপি ও জোটের নেতারা মুখোমুখি হয়ে আছেন। কোনো জায়গায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাঁদের অনুসারীরা জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথাবার্তা বলছেন। অনেক জায়গায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে ক্ষোভও আছে।

২০-দলীয় জোটের নয়টি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। দলগুলো হলো বিএনপি, এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস ও মুসলিম লীগ। জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে। তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না।

এসব দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীসহ উল্লিখিত দলগুলো এবং এর বাইরে অনিবন্ধিত দল জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), লেবার পার্টিসহ কয়েকটি শরিক দল প্রায় এক শ আসনে প্রার্থী দিতে চায়। তারা এলাকায় যাওয়া-আসা করছে।

কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন ক্রান্তিকাল। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কারান্তরীণ। তাঁর মুক্তির আন্দোলনটাই এখন অগ্রাধিকার। তবু যেহেতু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে, তাই শরিকদের বিষয়ে জোটের উপযুক্ত ফোরামে আলোচনা হওয়া উচিত বলে মনে করি।’

এদিকে গত সপ্তাহে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) তাদের সম্ভাব্য ৩০ জন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর একটি তালিকা গণমাধ্যমে পাঠায়। যদিও পরদিন
এলডিপির যৌথ সভায় ৩০ জনের তালিকাটিকে সঠিক নয় বলে দাবি করা হয়। জানা গেছে, প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিএনপি ও জোটের শরিকদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে, এই আশঙ্কায় এলডিপি সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা অস্বীকার করে।

জোটের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, হঠাৎ করেই এলডিপির প্রার্থী তালিকা গণমাধ্যমে পাঠানো অস্বস্তিরই বহিঃপ্রকাশ। অবশ্য এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপি জোটের প্রধান কাজ হচ্ছে পরিকল্পিত আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। তবে শরিক দলগুলোর যারা নির্বাচন করতে ইচ্ছুক, তাদের ব্যাপারে বিএনপির ইতিবাচক চিন্তা করা উচিত। বিশেষ করে নবাগত প্রার্থীদের নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে।

জোটের সাতটি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত শরিকদের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনী সমঝোতা বা আসন ভাগাভাগি প্রশ্নে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো উদ্যোগও দৃশ্যমান নয়।

শরিক দলের নেতাদের কেউ কেউ আবার খালেদা জিয়ার কারামুক্তির বিষয়ে ফয়সালার পর নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরুর পক্ষপাতী। তাঁরা বর্তমান পরিস্থিতিতে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে চাপাচাপিকে শোভন মনে করছেন না। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন আমাদের মুখ্য দাবি হলো খালেদা জিয়ার মুক্তি। এর বাইরে অন্য কিছু চিন্তা করি না।’ প্রায় একই রকম মত দিয়েছেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদেরও।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে। তিনি মুক্ত হয়ে ফিরলে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবেন। সে পর্যন্ত শরিকদের অপেক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শরিকদের প্রার্থিতা নিয়ে আমরা এখনো চিন্তা করিনি। এখন জোটের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপারসনের মুক্তি। তাঁকে নিয়েই আমরা নির্বাচনে যাব।’