অংশীদারত্বের পথ সন্ধান

>• বৃহস্পতিবার লন্ডনে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের কৌশলগত সংলাপ
• আলোচনায় থাকবে রাজনীতি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ।
• বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব।
• যুক্তরাজ্যের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দপ্তরের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য তাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে নিতে কৌশলগত সংলাপ শুরু করেছিল। ব্রেক্সিটের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়া আর বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার সময়কালে দুদেশের সম্পর্কের মাত্রা কী হবে, সেটা এখন দুই দেশের অগ্রাধিকার। এমন এক আবহে আগামী বৃহস্পতিবার লন্ডনে দুই দেশের দ্বিতীয় কৌশলগত সংলাপে সম্পর্ককে অংশীদারত্বের পর্যায়ে নেওয়ার প্রাথমিক আলোচনা হবে।

রাজনীতি ও দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলি, অর্থনীতি ও উন্নয়ন সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং সমকালীন বৈশ্বিক বিষয়াবলি—এই চারটি প্রতিপাদ্য ধরে আলোচনা হবে।

আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দপ্তরের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি সায়মন ম্যাকডোনাল্ড নিজ নিজ দেশের নেতৃত্ব দেবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত শুক্রবার প্রথম আলোকে জানান, রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনার সময় খুব স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আসবে। যেখানে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে বাংলাদেশের অঙ্গীকার তুলে ধরা হবে। নিরাপত্তা সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফেরত আনার বিষয়টি তুলবে বাংলাদেশ।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করতে দুই দেশের রাজনৈতিক যোগাযোগের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ঢাকা সফর করেন। কক্সবাজার গিয়ে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাজ্যের জোরালো রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। আগামী মাসে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন যাচ্ছেন। এ সময় দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বৈঠকের কথা রয়েছে। ওই বৈঠকের সময় সম্পর্ককে অংশীদারত্বে নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখতে হলে বাংলাদেশকে আলাদা পদ্ধতির মাধ্যমে তা পেতে হবে। এ বিষয়ে এবারের কৌশলগত সংলাপে বাংলাদেশ আলোচনা করতে আগ্রহী। যুক্তরাজ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে বলে ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। শিক্ষা, জ্ঞান, দক্ষতার উন্নয়ন, সৃজনশীলতার বিকাশে পারস্পরিক সহযোগিতা বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে।

ইইউর আদলে আলাদা এসওপি

যুক্তরাজ্য অবৈধভাবে অবস্থানকারী বাংলাদেশের লোকজনকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে সংলাপে আলোচনার কথা রয়েছে। যুক্তরাজ্য দাবি করে আসছে, সে দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি অবৈধভাবে বাস করছে। তবে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যার তালিকা দিতে না পারলেও যুক্তরাজ্য এখন ইইউর আদলে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি মানসম্মত পরিচালনা পদ্ধতি (এসওপি) সই করতে চায়। আর বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, লোকজনের নাগরিকত্ব নিশ্চিত হলে তাদের ফেরাতে যে বাংলাদেশ কালক্ষেপণ করে না, ইইউর সঙ্গে এসওপি বাস্তবায়নে তা প্রমাণিত হচ্ছে। কাজেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইইউর আদলে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নতুন চুক্তি করতে নীতিগতভাবে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নেই।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ

সমকালীন বৈশ্বিক বিষয় প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি আলোচনায় আসবে। এ সমস্যার টেকসই সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, ইইউর মতো ফোরামে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় দেশটি কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।