ফেসবুকে ওঁদের স্মৃতিকথা

রফিক জামান, সানজিদা হক ও তাঁদের সন্তান অনিরুদ্ধ। এঁদের খোঁজ চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এক স্বজন। দুর্ঘটনায় সন্তানসহ এই দম্পতি নিহত হয়েছেন।  ছবি: ফেসবুক থেকে
রফিক জামান, সানজিদা হক ও তাঁদের সন্তান অনিরুদ্ধ। এঁদের খোঁজ চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এক স্বজন। দুর্ঘটনায় সন্তানসহ এই দম্পতি নিহত হয়েছেন। ছবি: ফেসবুক থেকে

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এখন দিনকে দিন জনজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। মানুষ তাঁর ব্যক্তিজীবনের আনন্দ-বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতা, পাওয়া-হারানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের কথা তুলে ধরেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। হাতে হাতে স্মার্টফোন থাকায় দ্রুত মন্তব্য লিখে তার সঙ্গে ছবি তুলে আপলোড করা খুব সহজ।

গতকাল ইউএস-বাংলার যে ড্যাশ-৮ বোম্বার্ডিয়ার বিমানটি নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়েছে, তার যাত্রীদেরও অনেকে যাত্রার আগমুহূর্তে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছবিসহ নেপালযাত্রার কথা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। এই ছবি আর মন্তব্যগুলো তাঁদের স্মৃতি হয়ে আছে।

উড়োজাহাজে ছিলেন (বাঁ থেকে) স্বর্ণা, আলোকচিত্রী এফ এইচ প্রিয়ক, তাঁর স্ত্রী অ্যানি ও তাঁদের সন্তান তামারা। স্বর্ণা ও অ্যানি নেপালের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে সন্তানসহ প্রাণ হারিয়েছেন প্রিয়ক।  ছবি: ফেসবুক থেকে
উড়োজাহাজে ছিলেন (বাঁ থেকে) স্বর্ণা, আলোকচিত্রী এফ এইচ প্রিয়ক, তাঁর স্ত্রী অ্যানি ও তাঁদের সন্তান তামারা। স্বর্ণা ও অ্যানি নেপালের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে সন্তানসহ প্রাণ হারিয়েছেন প্রিয়ক। ছবি: ফেসবুক থেকে

‘তৃতীয়বার মধুচন্দ্রিমায় কাঠমান্ডু যাচ্ছি। সঙ্গে মেহেদি হাসান রোমিও, ছবি দিলাম চারটি’—এই পোস্ট দিয়েছেন সোনামণি। পোস্টের সঙ্গে ব্যাগ হাতে শাহজালালের বহির্গমন লাউঞ্জে তাঁর একটি বড় ছবি। পাশে মেহেদির সঙ্গে একটি ছবি এবং তাঁর দুটি ছবি। এবারের মধুচন্দ্রিমা যে মধুর হয়নি তাঁদের জীবনে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিমানে ওঠার আগে সবার দোয়া চেয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন অ্যানি প্রিয়ক। সঙ্গে এফ এইচ প্রিয়ক। তাঁরাও বহির্গমন লাউঞ্জে ট্রলিব্যাগ নিয়ে হেঁটে
যাওয়ার ছবি দিয়েছেন দুটি। তাঁরা লিখেছেন, ‘রেডি টু ফ্লাই টু কাঠমান্ডু ফ্রম হজরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট...প্লিজ কিপ আস অন ইয়োর প্রেয়ার।’

যাওয়ার আগে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই সরকারি কর্মকর্তা উম্মে সালমা (বাঁয়ে) ও নাজিয়া আফরিন চৌধুরী। তাঁরা দুজনই নিহত হয়েছেন।
যাওয়ার আগে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই সরকারি কর্মকর্তা উম্মে সালমা (বাঁয়ে) ও নাজিয়া আফরিন চৌধুরী। তাঁরা দুজনই নিহত হয়েছেন।

ইমরানা কবির তাঁর সঙ্গী রকিবুল হাসানের সঙ্গে কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন। তিনি গাড়িতে করে বিমানবন্দরে যাওয়া, বিমানবন্দরের যাত্রী লাউঞ্জে বসে থাকার বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি পোস্ট করেছেন। ছুটিতে নেপাল যাচ্ছেন—শুধু এটুকুই মন্তব্য করেছেন। পরে জানা যায়, ইমরানা কবির রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক, স্বামীর সঙ্গে তিনি নেপালে যাচ্ছিলেন।

ইউএস–বাংলা উড়োজাহাজের কো–পাইলট পৃথুলা রশীদ। দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হয়েছেন।
ইউএস–বাংলা উড়োজাহাজের কো–পাইলট পৃথুলা রশীদ। দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হয়েছেন।

‘টা টা মাই কান্ট্রি ফর ফাইভ ডে’স’ বলে মন্তব্য করে হ্যাট মাথায় একটি ছবি পোস্ট দিয়েছিলেন তরুণ পিয়াস রণি, বিমানবন্দরের যাত্রী লাউঞ্জ থেকে।

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা একটি মুঠোফোন।  ছবি: রয়টার্স
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা একটি মুঠোফোন। ছবি: রয়টার্স

সম্ভবত তাঁরা হবেন দুই বন্ধু অথবা থাকতে পারে আত্মীয়তার সম্পর্কও। বিমানে উঠে পাশাপাশি আসনে বসে ‘ভি’ দেখাচ্ছেন তাঁরা। এই ছবি পোস্ট দিয়েছেন তাহসিন রহমান। লিখেছেন, তানিম শেখের সঙ্গে যাচ্ছেন নেপালে, তবে বোঝা যাচ্ছে না কে কোন জন। যাত্রী লাউঞ্জে বসে হালকা খাবারের ছবি পোস্ট দিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা উম্মে সালমা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তা নাজিয়া আফরিন চৌধুরী। অনেকে আবার দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের যাত্রী হিসেবে থাকা তাঁদের আত্মীয় ও সুহৃদের ছবি দিয়ে তাঁদের ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন। রফিক জামান, সানজিদা হক ও তাঁদের শিশুপুত্র অনিরুদ্ধর ছবি দিয়েছেন রাকা নশীন নাওয়ার নামের একজন। রাকা তাঁর স্ট্যাটাসে খালাতো ভাই রফিকের পরিবারের খবর জানতে চেয়েছেন। বিমানটির কো-পাইলট পৃথুলা রশিদের ছবি দিয়েছেন আশিকুর রহমান। তিনি নিহত পৃথুলার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।