রিমান্ডে কী করল যে জাকির লাশ হয়ে ফিরল!

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন নিপীড়ন করে ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনকে হত্যা করে জেলে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে তারা কী করল যে জাকির লাশ হয়ে ফিরল!

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট নামক একটি সংগঠন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মুক্তির দাবিতে আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এদের দয়া নেই, মায়া নেই। এরা নৃশংসতম বর্বরতম শাসকগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। এদের কাছে মনুষ্যত্ব জীবন প্রাণের কোনো মূল্য নেই। আপনারা দেখেছেন, সেদিন ছাত্রনেতা রাজ বাঁচার জন্য আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল। আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমি ছেলেটাকে রক্ষা করতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। আজকে এই ক্ষোভ-ব্যথা-যন্ত্রণাকে শক্তিতে পরিণত করুন।’ তিনি বলেন, ‘এই যে কথায় কথায় আমাদের ভাইদের হত্যা করছে, ছেলেদেরকে হত্যা করছে, এদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ান। জনগণকে বলেন উঠে দাঁড়াতে। রাজপথে নামতে। এটাই একমাত্র পথ। বিকল্প কোনো পথ নেই।’

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দেশে আইন নাই, আদালত নাই, বিচার বিভাগ নাই কোথায় যাবেন আপনারা। আমাদের পথ একটাই—তা হলো রাজপথ। সেই রাজপথের মধ্যে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সব সমস্যার সমাধান করব বলে আমি বিশ্বাস করি। এটা আলোচনা সভা না হয়ে প্রতিবাদ সভা হলে খুশি হতাম। এখন প্রতিবাদ করারই সময়। আলোচনা করার সময় বোধ হয় শেষ হয়ে গেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে যে মামলায় নিম্ন আদালত সাজা দিয়েছে, মামলাটা দিয়েছিল ১ / ১১ অবৈধ সরকার। বাংলাদেশ থেকে রাজনীতি দূর করে দেওয়ার জন্য বিরাজনীতি করার জন্য সকল রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিয়েছিল। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলা ও আজকের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা দিয়েছিল। যারা গণতন্ত্রকে তার নিয়মমতো চলতে দিতে চায় না, তারা এই কাজগুলো করে। বাংলাদেশে পাকিস্তান আমল থেকে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে অনেকবার। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন—এমন ব্যক্তিরা এসে ক্ষমতা দখল করেছেন এবং রাজনীতিকে নির্বাসিত করার চেষ্টা করেছেন।

ফখরুল বলেন, ‘দুঃখ হচ্ছে এটা যখন কোনো সামরিক জান্তা করে, ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের মতো সেনা সমর্থিত কোনো অবৈধ সরকার করে। সেটা একটা কথা। কিন্তু যখন একটা রাজনৈতিক দল যাদের দীর্ঘ অতীত রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। তারা যখন এই কাজ করেন, তখন যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কেউ সরতে চায় না। ক্ষমতা দখল করে রাখে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ বারবার এই সমস্ত শক্তিকে এই সমস্ত ব্যক্তিদের যারা জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় তাদের টেনে হিচড়েই নামিয়ে ফেলেছে।’

খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে ছলচাতুরী করে আটকে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেন? ভয়ে। এত ভয় পান যে বেগম খালেদা জিয়া যদি আজকে বের হন আপনাদের মসনদ জনগণের স্রোতে ভেসে যাবে। এই কারণেই আপনারা তাকে আটকে রেখেছেন।’

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক সাবেক মন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সুকোমল বড়ুয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ।