নেপাল যাওয়ার আগে ইস্তফা দিয়েছিলেন পাইলট আবিদ

আবিদ সুলতান
আবিদ সুলতান

• মঙ্গলবার নেপালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবিদ।
• আবিদ ১৯৮৪ সালে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন।
• ২০ বছর পর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে অবসরে যান।
• পাইলট হিসেবে ইউএস-বাংলায় যোগ দেন ২০১৫ সালের ৬ মে।
• পাইলটদের প্রশিক্ষকের দায়িত্বেও ছিলেন।
• ৪,০০০ ঘণ্টার বেশি সময় আকাশে উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা।

নেপালের কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান গত সোমবার নেপালে যাওয়ার আগেই পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন। যদিও তাঁর এ পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। আবিদ সুলতানের পরিবার ও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ কর্মীর কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

কাঠমান্ডুতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটিতে ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের সঙ্গে সহকারী পাইলট হিসেবে ছিলেন পৃথুলা রশিদ। তাঁরা দুজনই এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে পৃথুলা রশিদ দুর্ঘটনার সময়ই প্রাণ হারান। আর গতকাল মঙ্গলবার নেপালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবিদ সুলতান।

আবিদ সুলতানের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস থেকে মাস দুয়েক আগে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পদত্যাগ করে সম্প্রতি ইথিওপিয়ার একটি বিমান পরিবহন সংস্থায় যোগ দেন। ওই কর্মকর্তা আবিদ সুলতানের খুবই ঘনিষ্ঠ। তাঁর মাধ্যমে ওই সংস্থায় আবিদ সুলতানের নিয়োগের বিষয়টিও প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। তিনি ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইলে নেপাল যাওয়ার আগে পদত্যাগপত্র পাঠান।

আবিদ সুলতানের সহকর্মী একাধিক পাইলটের ভাষ্য, তাঁর পদত্যাগপত্র যদি গৃহীত না-ও হয়ে থাকে, তাঁকে দিয়ে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট চালানো নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি। উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার সঠিক কারণ জানতে দীর্ঘমেয়াদি বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। এ তদন্ত সম্পন্ন করতে উড়োজাহাজে থাকা ব্ল্যাকবক্স গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে কাজ করবে। ব্ল্যাকবক্স হলো উড়োজাহাজে রাখা এমন একটি যন্ত্র, যা চলাচলের সব ধরনের তথ্য ও কথোপকথন সংরক্ষণ করে রাখে। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলেও এটি সাধারণত ধ্বংস হয় না।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন পাইলট উড্ডয়নের আগমুহূর্ত পর্যন্ত চাইলে উড়োজাহাজ চালাতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। আবিদ সুলতানের পদত্যাগ করার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।’

আবিদ সুলতানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গতকাল বিকেলে উত্তরায় তাঁর বাসায় যান এ প্রতিবেদক। উত্তরার ওই বাসায় স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। আবিদ সুলতানের স্ত্রী সরাসরি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। আবিদের মৃত্যুর খবর শুনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী ও ছেলে।

২০১৫ সালের ৬ মে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসে পাইলট হিসেবে যোগ দেন আবিদ সুলতান। তিনি ইউএস-বাংলার ড্যাশ এইট কিউ ৪০০ উড়োজাহাজের পাইলট দলের প্রধান ছিলেন। পাইলটের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ উড়োজাহাজের প্রশিক্ষকের দায়িত্বেও ছিলেন আবিদ সুলতান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ২০ বছর চাকরি করার পর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হিসেবে তিনি অবসরে যান। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসে যোগ দেওয়ার আগে দেশি-বিদেশি একাধিক বিমান পরিবহন সংস্থায় কাজ করেন তিনি।

পাইলট হিসেবে চার হাজার ঘণ্টার বেশি সময় আকাশে উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা ছিল ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের। এর মধ্যে ড্যাশএইট মডেলের উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল ১ হাজার ৭০০ ঘণ্টার বেশি। কানাডার বোমবার্ডিয়ার কোম্পানির তৈরি এই উড়োজাহাজ চালানোয় বিশেষ প্রশিক্ষণ সনদ ছিল তাঁর। ইউএস-বাংলার বহরে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ যে ড্যাশএইট উড়োজাহাজটি যুক্ত হয়, সেটি কানাডা থেকে চালিয়ে আনেন আবিদ সুলতান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ক্যাপ্টেন লুৎফর রহমান ও মারুফ আহমেদ।