'এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই'

গত শুক্রবার রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা ফার্মগেটের কাছ থেকে দুই ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে একটি চক্র। এ চক্রের নেতৃত্বে মানিকগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতা সেলিম মোল্লা ও তাঁর ছেলে ছাত্রলীগের নেতা রাজিবুল ইসলাম। দুদিন পর রোববার রাতে র‍্যাব-২-এর একটি দল মানিকগঞ্জের সেলিম মোল্লার বাসা থেকে অপহৃত দুজনকে উদ্ধার করে। এ ধরনের ঘটনা থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চেয়ে প্রথম আলোর ফেসবুকের পক্ষ থেকে পাঠকদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। পাঠকের সেখানে গঠনমূলক নানা মন্তব্য করেন।

মো. মনির নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘এ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু কথা হলো শাস্তি দেবে কারা? এদের টাকা আছে, ক্ষমতা আছে—তাই এরা ধরা পড়লেও বের হয়ে যায়, শাস্তি হয় না। আইনের প্রয়োগ হয় যারা গরিব, আর যাদের টাকার জোর, ক্ষমতার জোর নেই, তাদের ওপর।’

অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় বড় করে না দেখার আহ্বান জানিয়ে মো. নাঈম সরকার বলেন, ‘কোনো দল উল্লেখ না করে বা দলের নাম না করে, সে যে অপরাধী এটা উল্লেখ করে তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। যাতে রাজনীতির নাম নিয়ে এমন কাজ আর কেউ না করতে পারে।’

এ সমস্যা মোকাবিলায় প্রশাসন, সরকার এবং রাজনৈতিক দল সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন শাকিল হাসান। তিনি লিখেছেন, ‘এ দেশের প্রশাসন এবং সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষের জানমালের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে প্রশাসন এবং এর দায়বদ্ধ থাকে সরকারের। অতএব এগুলো থেকে মুক্ত হতে হলে এ রকম দলের নাম বিক্রি করে যারা অপহরণ, চাঁদাবাজি, খুন—এগুলো করে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে তাদের দেখে বাকিরাও ভালো হয়ে যায়। তা না হলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।’

এ ধরনের ঘটনার রাশ টেনে ধরতে হবে এখনই—এমনটাই মনে করেন রাজীব মোহাম্মদ। তিনি লিখেছেন, ‘সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, গণসচেতনতার অভাব এবং অপহরণকারীদের আইনের আওতায় না আনা অপরাধীদের আরও বেশি সাহসী করে তুলছে। এতে সমাজের শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। এখনই এসব অপরাধ রুখতে না পারলে ভবিষ্যতে সমাজে আরও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।’ তাঁর পরামর্শ, ‘অপহরণকারীদের ধরতে প্রয়োজনে নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।’

রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে বলে মনে করেন আবদুর রউফ। তিনি লিখেছেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই। পুলিশ আওয়ামী লীগের কথা শুনবে, সুতরাং আওয়ামী লীগ এ কাজ করলে পুলিশের পক্ষে তাদের ধরা কঠিন হবে।’

ফরিদ হায়দার ভূইয়া ব্যঙ্গাত্মক একটি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘উপায় একটাই। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সরকারিভাবে পর্যাপ্ত অর্থ প্রদান করা হোক, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তৃপ্ত না হয়! তাহলেই এরা কিঞ্চিৎ ঠিক হতে পারে! অবশ্য সম্ভাবনা খুবই কম।’

ক্ষমতাবানদের এসব কর্মকাণ্ডে হতাশ শামীম হাসান। তিনি লিখেছেন, ‘এ দেশ থেকে চলে যাওয়া। এ ছাড়া তো কোনো উপায় দেখছি না। যখন দেখি ক্ষমতাবানেরা এসব কাজ করে।’

বাবা-ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে অবাক ইমাম হোসাইন মো. রাব্বি। তিনি লিখেছেন, ‘এটা তো তামিল ছবির কাহিনি হয়ে গেল! সারা জীবন জানতাম বন্ধু-বান্ধব মিলে এসব কাজ করে, আজ জানলাম বাবা-ছেলে মিলেও করে। হায়!’

এসব লোকের কারণে রাজনৈতিক দল ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করেন বি এম মোশরেফুল প্রিন্স। তাঁর বক্তব্য, ‘ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নামধারী কতিপয় অসাধু লোকের জন্য আজ দলের তো বটেই, দেশেরও ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই দলীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ক্ষমতার একবার অপব্যবহার করেছে, তাকে আজীবন রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। নয়তো প্রশাসন কিচ্ছু করতে পারবে না।’

আজমীর লিখেছেন, ‘কিছু...কাজই হলো সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে নিজের আখের গোছানো। তাদের ধ্যানজ্ঞান হলো এমন কিছুই যদি করতে না পারলাম তাহলে সরকারি দল করে কী লাভ? তাদের আরাধনা হলো “এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই”!’