কথিত ঘটনায় দৌড়ের ওপর সবাই

বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা দৌড়ের ওপর রয়েছেন। মামলার আসামি ৮৯ জন। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আরও ২০০ থেকে ২৫০ জন। বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের ঘটনাটি উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের ভেল্লাপাড়ায় ঘটেছে, এমন তথ্য এজাহারে উল্লেখ করেছে পুলিশ। অথচ ওই ইউনিয়নে ভেল্লাপাড়া নামে কোনো জায়গাই নেই। 

পটিয়ার জিরি ইউনিয়নের একটি জায়গার নাম ভেল্লাপাড়া। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে এলাকাটি। পুলিশের করা মামলায় বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ভেল্লাপাড়া ব্রিজ এলাকায় মহাসড়কে নেতা-কর্মীরা ককটেল ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটান। গাড়ি ভাঙচুর করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন।
মামলার বাদী পটিয়ার কালারপোল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাস্থল ভেল্লাপাড়া ঠিকই আছে। কুসুমপুরা ইউনিয়ন হয়তো লেখা হয়েছে। ইউনিয়নের নাম ভুল হলে তদন্ত কর্মকর্তা ঠিক করে নেবেন।
৪ ও ৫ মার্চ ভেল্লাপাড়ার কথিত ঘটনাস্থলে গিয়ে মহাসড়কের পাশের দোকানদার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বোমা বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত দুই-তিন মাসে এলাকায় মারামারি, ককটেল ফাটানো, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাই ঘটেনি। পুলিশের ভয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের কেউ নাম উদ্ধৃত হয়ে কথা বলতে চাননি।
ভেল্লাপাড়ায় মহাসড়কের পাশের এক ফল বিক্রেতা বলেন, ‘খালেদার মামলার রায়ের আগে-পরে এলাকায় টুঁ শব্দও হয়নি।’ মহাসড়কের পাশের একটি পোশাক কারখানার নিরাপত্তাকর্মী বলেন, গাড়ি ভাঙচুর যদি হতো, তাহলে হইচই পড়ে যেত।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পটিয়া থানার এসআই আরিফুল করিম বলেন, সেদিন ভাঙচুরের শিকার হওয়া গাড়িগুলো তাঁরা দেখতে পাননি, তবে কাচ পেয়েছিলেন। এ ছাড়া বেশ কিছু লাঠি এবং ককটেলের খোসা পাওয়া গেছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, বিএনপি নেতা এনামুল ও রেজাউলের নেতৃত্বে মহাসড়কে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির তিনজন নেতা বলেন, মামলাটি যে সাজানো, তা এজাহারেই পরিষ্কার। কারণ, ওই দুই নেতা এবং তাঁদের অনুসারীদের মধ্যে চরম বিরোধ। তাঁরা কখনো একসঙ্গে থাকেন না।
পটিয়া পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র নুরুল ইসলামকে ভেল্লাপাড়ার মামলায় আসামি করা হয়নি। তিনি বলেন, নেতা-কর্মীদের অনেকেই পটিয়ায় নেই। যাঁরা এলাকায় থাকেন, তাঁরাও রাতে ঘরে ঘুমান না। দৌড়ের ওপর থাকেন। পাঁচজন একসঙ্গে হলেই পুলিশ চলে আসে। তিনি বলেন, এজাহারে নাম থাকা তবু ভালো। জামিন নেওয়া যায়। কিন্তু মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের তালিকায় চাইলে যে কাউকে ফেলতে পারে পুলিশ। তাই সবাই ভয়ে থাকে।
ভেল্লাপাড়ার মামলায় পটিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহসভাপতি মো. জমির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। জমিরকে না পেয়ে তাঁর ছোট ভাই আজিজুল হক ও বড় ভাই মো. জাবেদকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের মামলায় আসামি করা হয়। দুই ভাই কয়েক দিন আগে জামিন পেয়েছেন।
পটিয়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী মনিরও ভেল্লাপাড়ার মামলার আসামি। বাড়িতে গিয়ে তাঁকে না পেয়ে ছোট ভাই কলেজের শিক্ষার্থী হামিদ হাসানকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাঁকে মামলার আসামি করা হয়।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করার বিষয়ে পটিয়ার সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ তো মামলা দেয়নি। পুলিশ মামলা দিয়েছে।
নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও বিএনপির বিরুদ্ধে পুলিশের কোনো অভিযোগ নেই বলে জানান পটিয়া থানার ওসি শেখ নেয়ামত উল্লাহ। তাঁর দাবি, ভেল্লাপাড়ায় বোমা বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলেই মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলায় তাঁদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। পুলিশ কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কিছু করছে না। সব মামলার বাদী হচ্ছে পুলিশ। পুলিশ তো ইশারায় নড়ে।