প্রথমে সন্দেহে স্বামী, এখন দুই কাঠমিস্ত্রি

ছবি: নিহত মরিয়ম
ছবি: নিহত মরিয়ম

মোবাইল ফোন কলের সূত্র ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং কলেজের হাউস কিপার মরিয়ম খাতুন (৪২) হত্যা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকার আদালতে তাঁরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার এই দুই সন্দেহভাজন খুনি হলেন কাঠমিস্ত্রি অমিত হাসান (২৪) ও ইউসুফ ওরফে ঠান্ডা (২০)। এর আগে পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে নিহত ব্যক্তির স্বামী আবদুল হান্নানকে (৫৬) গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দুই কাঠমিস্ত্রিকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, এর আগে স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন কিছু তারা পায়নি, যাতে তাঁকে সন্দেহ করা যায়।

যদিও গ্রেপ্তার তিনজনই বর্তমানে কারাগারে আছেন।

মরিয়ম খাতুন চলতি বছরের ৬ মার্চ সকালে বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। কাজ শেষে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বাসায় ফেরার পর সন্ধ্যার আগে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ভাই রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় খুনের মামলা করেন। এ খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনে তদন্ত শুরু করে দারুস সালাম থানার পুলিশ।

প্রথম সন্দেহ স্বামীকে ঘিরে
নিহত ব্যক্তির স্বামী আবদুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয় ৭ মার্চ। পরদিন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তাঁকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার এসআই মো. যোবায়ের। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আসামি হান্নান বাসায় ফেরার ৩০ মিনিট পর পুলিশসহ অন্যদের স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানান। স্ত্রী খুন হয়েছেন, বিষয়টি এত সময় পর জানানোর কারণে পুলিশের সন্দেহের তির স্বামীকে ঘিরেই তৈরি হয়।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

যেভাবে সন্দেহে দুই মিস্ত্রি

মরিয়ম খুনের দুই দিন পর ওই বাসার টয়লেটের প্যান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি ধারালো চাকু ও এক জোড়া স্যান্ডেল মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা যুবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে এই খুনে জড়িত সন্দেহে মরিয়মের স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। দাম্পত্য কলহের কারণে খুন হয়েছিলেন কি না, সেই সন্দেহের জের ধরে নিহত ব্যক্তির স্বামী হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু পরে যখন জানা যায়, বাসা থেকে নিহত ব্যক্তির মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া গেছে, তখন অন্য দিকগুলোও মাথায় রেখে তদন্ত হয়।

বাসা থেকে নিহত মরিয়মের মুঠোফোন স্যামসাং গ্যালাক্সি কোর-২, একটি সনি ক্যামেরা, স্বর্ণসদৃশ ইমিটেশনের গয়না খোয়া যায়।

এসআই বলেন, নিহত ব্যক্তির মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) সংগ্রহ করার পর দেখা যায়, মরিয়মের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় আসামি ইউসুফের সঙ্গে। পরে তাঁকে ১০ মার্চ গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি খুনের দায় স্বীকার করেন। গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর বন্ধু অমিতকে। যিনি এই খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।

আদালতে জমা দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, আসামি ইউসুফ ও অমিত কাঠমিস্ত্রি। তাঁরা দারুস সালাম এলাকায় বসবাস করেন। ছয় থেকে সাত মাস আগে এই দুজনই মরিয়মের বাসায় ফার্নিচারের কাজ করেছেন। ঘটনার দুই দিন আগেও ওই ফ্ল্যাটের দ্বিতীয় তলার একটি বাসায় ফার্নিচারের কাজ করেন তাঁরা। তখন মরিয়ম তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বলে আসেন, তাঁর বাসার একটি কাঠের আলনা ঠিক করে দিতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন এই দুজন বিকেল পাঁচটার পর প্রবেশ করেন। ঘরে ঢুকে তাঁরা মরিয়মকে টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র বের করে দিতে বলেন। মরিয়ম না দেওয়ায় তাঁরা চাকু দিয়ে জবাই করে হত্যা করে পালিয়ে যান।

১১ মার্চ আসামি অমিত হাসানের কেরানীগঞ্জের বাসা থেকে নিহত মরিয়মের মুঠোফোন, ক্যামেরাসহ খোয়া যাওয়া জিনিসপত্র জব্দ করে পুলিশ।

মামলার বাদী নিহত নারীর ভাই রেজাউল বলেন, কে তাঁর বোনকে খুন করেছে, তা তিনি জানেন না। তবে বোন খুন হওয়ার পর ভগ্নিপতিকে পুলিশ সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।

মরিয়মের ছেলে রাশিদ মুজাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, বাবা ছাড়াও যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের তিনি চেনেন। তাঁদের বাসায় ফার্নিচারের কাজ তাঁরা করেছিলেন। যারাই তাঁর মাকে খুন করুক, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।