ভেজা চোখে স্বজনদের সারতে হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়া

কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ২৩ বাংলাদেশির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ইউএনবি থেকে নেওয়া
কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ২৩ বাংলাদেশির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ইউএনবি থেকে নেওয়া

স্বামী নুরুজ্জামান বাবুর ছবি বুকে ধরে আর্মি স্টেডিয়ামে এসেছেন সুলতানা আক্তার। সঙ্গে ১০ বছরের ছেলে হামিম, ননদসহ স্বজনদের অনেকেই। সবার চোখেই জল।  নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ২৩ বাংলাদেশিরই একজন নুরুজ্জামান।

শুধু নুরুজ্জামানের স্বজনেরা নন, নিহত সবার স্বজনেরাই এখানে ধীরে ধীরে জড়ো হয়েছেন।  হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৩ জনের মরদেহ নিয়ে নামে বিমানবাহিনীর একটি উড়োজাহাজ। সেখান থেকে জানাজার উদ্দেশ্যে লাশগুলো আর্মি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়ার কথা।

পুলিশকে নিহত স্বামীর সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছেন সুলতানা। ছবি: প্রথম আলো
পুলিশকে নিহত স্বামীর সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছেন সুলতানা। ছবি: প্রথম আলো

এই ২৩ জনের স্বজনদের জন্য ২৩ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকই নির্দিষ্ট ফাইল নিয়ে স্বজনদের খুঁজছেন। পেলেই তাঁদের থেকে তথ্য নিয়ে ফরম পূরণ করে স্বাক্ষর নিয়ে রাখছেন।

পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আবদুল আহাদ বলেন, লাশ যাঁরা জিম্মা নেবেন, তাঁদের একটি ফরম পূরণ করে স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে। কারণ, পরে ক্ষতিপূরণ বা সরকারি অনুদানগুলো ওই ঠিকানাতেই যাবে।

নিহত স্বামীর তথ্য দেওয়ার সময় সুলতানা আক্তারের চোখ থেকে পানি ঝরছিল। তাঁর স্বামী নুরুজ্জামান রানার অটোমোবাইলস লিমিটেডের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ফোরম্যান ছিলেন। রানার এ দেশে মোটরসাইকেল তৈরি ও বিপণনকারী সংস্থা। নেপালেও ব্যবসা রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। নুরজ্জামানসহ তিনজন নেপালে ম্যাকানিকদের প্রশিক্ষণ দিতে যাচ্ছিলেন। উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় তিনজনই নিহত হন।

নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে চলছে তথ্য সংগ্রহ। ছবি: প্রথম আলো
নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে চলছে তথ্য সংগ্রহ। ছবি: প্রথম আলো

আজ সকালে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিহত এই বাংলাদেশিদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে আটটার দিকে মরদেহগুলো সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। নয়টার দিকে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

নিহত প্রত্যেকের নামে তৈরি হচ্ছে ফাইল। ছবি: প্রথম আলো
নিহত প্রত্যেকের নামে তৈরি হচ্ছে ফাইল। ছবি: প্রথম আলো

যেসব যাত্রীর মৃতদেহ ঢাকায় আনা হয়েছে, তাঁরা হলেন ফয়সল আহমেদ, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আক্তারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান, সানজিদা হক, হাসান ইমাম, আঁখি মণি, মিনহাজ বিন নাসির, এফ এইচ প্রিয়ক, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহিরা তানবিন শশী রেজা, উম্মে সালমা, অনিরুদ্ধ জামান, নুরুজ্জামান ও রফিক উজ জামান।
যে চার বিমান ক্রুর মৃতদেহ আনা হবে, তাঁরা হলেন আবিদ সুলতান, পৃথুলা রশীদ, খাজা হোসেন মোহাম্মদ শফি ও শারমিন আক্তার নাবিলা।

১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার ড্যাস ৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৪ ক্রুসহ বিমানের ৭১ জনের সবাই হতাহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৬ বাংলাদেশি, ২২ নেপালি, ১ জন চীনাসহ ৪৯ জন নিহত হন। আর ১০ বাংলাদেশি, ৯ নেপালি, ১ মালদ্বীপের নাগরিকসহ ২০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের কাঠমান্ডুর তিনটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। আর নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ নেওয়া হয় টিচিং হাসপাতালের মর্গে।