বিতার্কিকেরা গণতান্ত্রিক দেশ গড়বে

প্রথম আলো ১৩তম নাফিয়া গাজী আন্তবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে গতকাল মঞ্চে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কার বিজয়ীরা।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ১৩তম নাফিয়া গাজী আন্তবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে গতকাল মঞ্চে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কার বিজয়ীরা। ছবি: প্রথম আলো

দুর্নীতি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা থাকার পরও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশকে আরও এগিয়ে নেবে তরুণ প্রজন্ম। তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে ভবিষ্যতের বাংলাদেশের যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠতে সহায়তা করবে বিতর্ক প্রতিযোগিতা। বিতার্কিকেরাই পারেন সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে।

প্রথম আলো ১৩তম নাফিয়া গাজী আন্তবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে গতকাল রোববার অতিথিরা এভাবেই বিতর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস)। সহযোগিতায় ছিল প্রথম আলো

গতকাল বিকেলে টিএসসি মিলনায়তন পরিণত হয় এক টুকরো সংসদে। স্পিকারের সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে অংশ নেন সরকারদলীয় সাংসদেরা, অন্য পাশে বিরোধী দল। ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা-উপনেতা। যুক্তিতর্ক-বক্তৃতা চলে, ছিল দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি।

চূড়ান্ত পর্বের বিতর্কের বিষয় ছিল, ‘এই সংসদ (বাংলাদেশ) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের দেশে ফেরত না পাঠিয়ে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে’। সরকারি দলে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ আর বিরোধী দলে ছিল অর্থনীতি বিভাগ। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় বিরোধী দল। শ্রেষ্ঠ বক্তা হয়েছেন বিরোধীদলীয় প্রধান শাহরিয়ার আহমেদ। প্রতিযোগিতায় ৪৮টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

বিতর্ক শেষে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক অপ্রতুল, অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পান। খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালরি নিশ্চিত করা যায়নি, ৮ ঘণ্টা ঘুমের নিশ্চয়তা দেওয়া যায়নি। তারপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার শিক্ষার্থীরা স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করে বিশ্বের অনেক নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন, আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এখনো ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গেছে। এসব ত্রুটি কাটিয়ে বাংলাদেশ নতুন উদ্যমে জেগে উঠবে। আর এই জাগরণে নেতৃত্ব দিতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। প্রথম আলোর একটি লক্ষ্য বাংলাদেশের জয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান।

চূড়ান্ত পর্বের বিতর্কে সরকারি দলের সদস্যরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টি সামনে আনেন এবং মানবিকতার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুনর্বাসন করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। বিরোধী দলের সদস্যরা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেন।

স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন ডিইউডিএসের মডারেটর অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন। ডেপুটি স্পিকার ছিলেন হাসান আহমেদ চৌধুরী। বিচারক ছিলেন এ কে এম শোয়েব, রাশেদুল আলম, রথীন্দ্রনাথ দত্ত, মুনীরুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিইউডিএসের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দীক। সঞ্চালনা করেন ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী নাফিয়া গাজী ১৯৯১ সালের ২৯ মার্চ রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের সামনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তিনি একজন বিতার্কিক ছিলেন। তাঁর স্মরণে বিতর্ক প্রতিযোগিতা চালু করে ডিইউডিএস। আগে দুই বছর পরপর এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। গত বছর থেকে আয়োজনটি প্রতিবছর করা হচ্ছে।