সেই সোমবারই তাঁরা এলেন, তবে লাশ হয়ে

গত সোমবার দেশ ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে ক্যামেরাবন্দী হয়েছিলেন প্রিয়ক, অ্যানি ও তাঁদের শিশুকন্যা প্রিয়ন্ময়ী (ডান থেকে)। আজ সোমবার প্রিয়ক-প্রিয়ন্ময়ী ফিরেছেন লাশ হয়ে। ছবি: সংগৃহীত
গত সোমবার দেশ ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে ক্যামেরাবন্দী হয়েছিলেন প্রিয়ক, অ্যানি ও তাঁদের শিশুকন্যা প্রিয়ন্ময়ী (ডান থেকে)। আজ সোমবার প্রিয়ক-প্রিয়ন্ময়ী ফিরেছেন লাশ হয়ে। ছবি: সংগৃহীত

সোমবার বেলা ১১টায় হাসপাতাল ছেড়ে তড়িঘড়ি করে বাড়ি ফিরেছেন অ্যানি। কাঠমান্ডু ট্র্যাজেডিতে আহত এই নারী হারিয়েছেন স্বামী এফ এইচ প্রিয়ক ও আড়াই বছরের সন্তান প্রিয়ন্ময়ীকে। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর বিষয়টি জানতেন না। গতকাল রোববার রাতে তাঁকে জানানো হয় এই দুঃসংবাদ।

প্রিয়কের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে ফিরে টিভির সামনে বসে স্বামী-সন্তানের নিথর দেহ দেশে আসার খবর নিচ্ছেন অ্যানি। ছেলে ও নাতনির লাশের অপেক্ষায় ছিলেন প্রিয়কের মা-ও। তিনিও তাকিয়ে আছেন টিভির পর্দার দিকে। দুজনই নিস্তব্ধ। পাশে থাকা অন্য স্বজনেরাও তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না। সোমবার রাত আটটার দিকে দুটি কফিনে এল প্রিয়জনদের লাশ।

প্রিয়কের চাচাতো ভাই সাদ্দাম হোসেন জানান, গত রাতে প্রিয়ক-প্রিয়ন্ময়ীর মৃত্যুর সংবাদটি মা ও স্ত্রীকে জানানো হয়। এরপর থেকে তাঁরা আর স্বাভাবিক নেই। বেশি কথা বলতে পারছেন না। যেন অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন। হাসপাতালে থাকতেই অ্যানিকে জানানো হয়, তাঁর সঙ্গে থাকা দুই প্রিয়জন আর নেই। এ দুঃসংবাদ পাওয়ার পর থেকে বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। সোমবার সকালে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল থেকে বাসায় নেওয়া হয়।

অ্যানি কান্নাকাটি করে বারবার বলছিলেন, ‘সোমবার আমরা নেপালে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। আজ সেই সোমবারই আমার স্বামী-সন্তান ফিরছে, তবে লাশ হয়ে।’

প্রিয়কের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, সোমবার লাশ দুটি বাড়িতে রাখা হবে। মঙ্গলবার সকাল নয়টায় স্থানীয় আবদুল আওয়াল কলেজমাঠে প্রিয়ক ও তাঁর শিশুকন্যার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাঁর নিজ বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা হবে। প্রিয়কদের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগরহাওলা গ্রামে।

১২ মার্চ সোমবার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হন প্রিয়ক ও তাঁর আড়াই বছরের কন্যা তামারা প্রিয়ন্ময়ী। একই ঘটনায় আহত হন প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার অ্যানি, ফুপাতো ভাই মেহেদি হাসান ও তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহার স্বর্ণা। আহত এই তিনজনকে গত শুক্রবার দেশে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, দেহে বড় ধরনের পোড়ার ক্ষত না থাকলেও তাঁরা মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত।