স্বজনদের সান্ত্বনা কে দেবে?

মোনাজাতের সময় কাঁদেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। আর্মি স্টেডিয়াম, ঢাকা, ১৯ মার্চ। ছবি: সাজিদ হোসেন
মোনাজাতের সময় কাঁদেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। আর্মি স্টেডিয়াম, ঢাকা, ১৯ মার্চ। ছবি: সাজিদ হোসেন

বেলা আড়াইটার কিছু পরে পৃথুলা রশীদের বাবা-মা আর্মি স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন। প্রিয় সন্তানকে নিতে এসেছেন সপ্তাহ খানেক পর। তবে পৃথুলা তখন বাক্সবন্দী হয়ে ঢাকার পথে। এস এম মাহমুদুর রহমানের বাবা-মা ঢুকলেন। মা চিৎকার করেই কাঁদলেন। মতিউর রহমানের বড় ভাই মাসুদুর রহমান ভাইয়ের ছবি হাতে বসে আছেন। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।

নেপালে ইউএস–বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ বাংলাদেশির স্বজনেরা কাঁদছেন। তাঁদের কান্না তখন সেখানে থাকা অন্যদের স্পর্শ করেছে।

নিহত ২৩ বাংলাদেশির মৃতদেহ আজ সোমবার রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মৃতদেহ স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর আগেই স্বজনেরা আসেন। স্বজন হারানো এই মানুষগুলোকে কে–ই বা সান্ত্বনা দেবেন।

গত সোমবার দুর্ঘটনার পর স্বজনেরা সাত দিন ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন এ শোক। পুলিশ কর্মকর্তারা একেকজনের ফাইল নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন স্বজনদের কাছে। নিহত এফ এইচ প্রিয়কের মামা তোফাজ্জল হোসেন ফরম পূরণের ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই দুজনকে বাড়ি নিয়ে গেলে কী অবস্থা হবে চিন্তাও করতে পারছি না। অ্যানিকে (প্রিয়কের স্ত্রী) কী বলে সান্ত্বনা দেব।’

ইউএস–বাংলার কেবিন ক্রু শারমিন আক্তার নাবিলার মা নীলা জামানও কাঁদছেন। শারমিনের আড়াই বছরের কন্যা ইনায়া ইমাম হিয়া বাবার কোলে চড়ে উৎসুক চোখে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। মা যে আর ফিরবে না, তা বোঝার অবস্থা এখনো ওর হয়নি।

রকিবুল হাসানের মা লিলি বেগমের কান্না থামছেই না। আর্মি স্টেডিয়াম, ঢাকা, ১৯ মার্চ। ছবি: সাজিদ হোসেন
রকিবুল হাসানের মা লিলি বেগমের কান্না থামছেই না। আর্মি স্টেডিয়াম, ঢাকা, ১৯ মার্চ। ছবি: সাজিদ হোসেন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাঁধে চড়ে বিকেল পাঁচটার পরে কালো কাপড়ে মোড়ানো কফিনগুলো একে একে মাঠে প্রবেশ করে। মঞ্চে সারি সারি করে রাখা হয় কফিনগুলো। জানাজা শেষে একে একে কফিন বুঝে নেওয়ার জন্য স্বজনদের ডাকা হয়। কফিনের কাছে যেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। কফিন ধরে স্বজনদের বিলাপ আশপাশে থাকা অন্যদেরও ছুঁয়ে যায়।

যেসব যাত্রীর মৃতদেহ আজ ঢাকায় আনা হয়েছে, তাঁরা হলেন ফয়সাল আহমেদ, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আক্তারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, রকিবুল হাসান, সানজিদা হক, হাসান ইমাম, আঁখি মণি, মিনহাজ বিন নাসির, এফ এইচ প্রিয়ক, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহিরা তানবিন শশী রেজা, উম্মে সালমা, অনিরুদ্ধ জামান, নুরুজ্জামান ও রফিক উজ জামান। ইউএস বাংলার বৈমানিক ও কেবিন ক্রু আবিদ সুলতান, পৃথুলা রশীদ, খাজা হোসেন মোহাম্মদ শফি ও শারমিন আক্তার নাবিলার মৃতদেহও আজ এসেছে।

১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৪ ক্রুসহ বিমানের ৭১ জনের সবাই হতাহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৬ বাংলাদেশি, ২২ নেপালি, ১ জন চীনাসহ ৪৯ জন নিহত হন। আর ১০ বাংলাদেশি, ৯ নেপালি, ১ মালদ্বীপের নাগরিকসহ ২০ জন আহত হন।