মাঝপথে আটকে গেছে তদন্ত

>• তনু হত্যার দুই বছর আজ।
• অন্তত দেড় শ লোককে জিজ্ঞাসাবাদ।
• আরও ৪-৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

‘দুই বছর হয়ে গেল কোনো বিচার পাইলাম না। সবাই শুধু বলছে দেখতাছি। আর কত দেখব ওরা?’ এ প্রশ্ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মা আনোয়ারা বেগমের। দুই বছরেও তাঁর মেয়ের হত্যার কোনো কিনারা হয়নি। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, এই মামলার তদন্ত মাঝপথে আটকে গেছে।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘এ সময়ে অন্তত দেড় শ লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় থাকা আরও ৪-৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাঁদের কেউ কেউ দেশের বাইরে ও প্রশিক্ষণে আছেন। জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই মামলার তদন্ত একটা পর্যায়ে যাবে।’

তনুর মা আনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়ে সার্জেন্ট জাহিদের বাসায় পড়াতেন। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে মেয়ের যোগাযোগ ছিল। সেই দিকে না গিয়ে উল্টো দিকে হাঁটছেন সবাই।

তদন্ত কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তনুর সঙ্গে সার্জেন্ট জাহিদের স্ত্রীর পরিচয় হয় সেলাই কাজ শিখতে গিয়ে সেনাকল্যাণ মার্কেটে। তাও ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের দিকে। এখন বললেই এভাবে তদন্ত করা যায় না।

 ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের কালভার্টের ২০ থেকে ৩০ গজ পশ্চিমে ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায়তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত তনু হত্যা মামলার তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হন। ২০১৬ সালের ১৬ মে তনুর পোশাকে প্রাপ্ত বীর্য পরীক্ষা করে তিনজনের ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া গেছে বলে সিআইডি জানায়। এরপর তনুর পোশাকে পাওয়া তিনটি ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে সন্দেহভাজন কয়েকজন ব্যক্তির ডিএনএ মেলানো হয়। তবে এতে কোনো ফলাফল আসেনি।

গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার অন্যতম সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, ‘দুই বছর হয়ে গেল বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত জায়গায় ঘটনা ঘটল, কিন্তু বিচার হলো না। এটা দুঃখজনক। সাধারণ মানুষের কাছে এই প্রশ্ন সব সময় থাকবে।’

তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মামলার বাদী তনুর বাবা (ইয়ার হোসেন) তিন মাস ধরে পায়ের ব্যথা নিয়ে ছুটিতে আছেন। আমাদের খুবই খারাপ অবস্থা। মেয়েটার বিচারই পাইলাম না।’