বরিশালে পানিতে ডুবে দিনে ৯ জনের মৃত্যু

দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় শুধু বরিশালে পানিতে ডুবে মারা যায় তিন গুণেরও বেশি মানুষ। গত এক বছরে বরিশাল বিভাগে ৩ হাজার ১৫৫ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে। প্রতিদিন গড়ে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর গুলশানে স্পেকট্রা কনভেনশন হলে আয়োজিত এক সেমিনারে জরিপের এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সংস্থাটি তাদের ‘ভাসা প্রকল্প’-এর আওতায় পানিতে ডোবার পরিস্থিতি নিয়ে এ জরিপ চালায়। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার ২৪টি উপজেলায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ১৬ জনের ওপর জরিপ চালানো হয়।

জরিপের ফলাফলে বলা হয়, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে পুকুরে ডুবে। ৬৭ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে পুকুরের পানিতে ডুবে। এ ছাড়া খালে ১৫ শতাংশ, ডোবায় ১৫ শতাংশ এবং নদীতে ৫ শতাংশ ডুবে মারা গেছে। বিশেষত, জুন থেকে অক্টোবর মাসে এ ধরনের দুর্ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। শিশুরাই সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে।

শিশুদের ডুবে মৃত্যুর ৬৩ শতাংশ ঘটে সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটার মধ্যে। কারণ, এই সময়ে বাবা-মা বিভিন্ন গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত থাকেন, শিশুদের দেখাশোনায় তাঁরা পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না।

জরিপে আরও বলা হয়, গত বছর শুধু বরিশালেই গড়ে ৩ হাজার ১৫৫ জন মারা গেছে পানিতে ডুবে। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। গত বছর এক থেকে চার বছর বয়সী ১ হাজার ৪১৮ শিশু মারা গেছে পানিতে ডুবে। অর্থাৎ, দিনে গড়ে চার শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পাঁচ থেকে নয় বছর বয়সী শিশুরা দ্বিতীয় ঝুঁকিতে আছে। পানিতে ডোবার ঘটনার দুই-তৃতীয়াংশই ঘটে পুকুরে এবং বাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যে।

গবেষণা নিয়ে সিআইপিআরবির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম ফজলুর রহমান বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় বরিশালের অবস্থান খুব খারাপ।

পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয় সেমিনারে। বরিশালের স্থানীয় ও অংশীদারদের যুক্ত করে কৌশল পরিকল্পনা নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া সাঁতার কার্যক্রম, শিশুদের জন্য নিরাপদ দিবাযত্ন কেন্দ্র কার্যক্রম পরিচালনা, প্রাথমিক চিকিৎসাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া, গ্রামভিত্তিক ইনজুরি প্রতিরোধ কমিটি করার সুপারিশ করা হয়।