আবিদের স্ত্রীর জীবনের সংকট কাটেনি

আবিদ সুলতানের সঙ্গে স্ত্রী আফসানা খানম। ফাইল ছবি
আবিদ সুলতানের সঙ্গে স্ত্রী আফসানা খানম। ফাইল ছবি

পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানমের জীবনের সংশয় কাটেনি। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আফসানা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। তাঁর জীবনের সংকট কাটেনি।

আফসানা এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটির পাইলট ছিলেন আবিদ। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে উদ্বিগ্ন তাঁর স্ত্রী আফসানা। প্রথমে তাঁকে জানানো হয়েছিল, আবিদ আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। পরে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ আসে। এরপর থেকে স্ত্রী আফসানা ভেঙে পড়েন।

গত রোববার সকাল থেকে আফসানা মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা বোধ করছিলেন। প্রথমে তাঁকে তাঁদের বাসার কাছে উত্তরাতেই একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়।

স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর শোক সামলে উঠতে পারেননি আফসানা। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার হয়েছে।

বর্তমানে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে আফসানার চিকিৎসা চলছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আফসানার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি তাঁর মৃত্যুর খবর দিয়ে কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে স্ক্রলও দেওয়া হয়। এই খবরে তাঁর আত্মীয়স্বজনের অনেকে হাসপাতালে আসতে থাকেন।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় আফসানার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সভা হয়। পরে আফসানার সবশেষ অবস্থা গণমাধ্যমকে জানান হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম। তিনি বলেন, ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানের স্ত্রী গত পরশু এই হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রথমে তাঁর সিটিস্ক্যান ও এনজিওগ্রাম করা হয়। এরপর তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। এর পর থেকে তিনি আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তাঁর দুইবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) হয়েছিল। প্রথমবার ছিল মৃদু, পরেরটি মারাত্মক। তাঁর মাথার খুলির একটি অংশ খুলে রাখা হয়েছে। এভাবেই এ ধরনের রোগের চিকিৎসা করা হয়। মস্তিষ্কের প্রেশার কমলে খুলি লাগান হবে।

অধ্যাপক বদরুল আলম বলেন, আফসানার মস্তিষ্কের কোনো উন্নতি হয়নি। তবে কিডনি, হৃদ্‌যন্ত্রসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বাভাবিকভাবে কাজ করেছে। রক্তচাপ ও তাপমাত্রা স্বাভাবিক। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারে আজ সকাল থেকে কিছু পুরোনো ওষুধ বাদ দিয়ে নতুন ওষুধ যোগ করে তাঁর চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতেতে তাঁকে বিদেশে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

হাসপাতালে আবিদ ও আফসানার পরিবারের অনেক আত্মীয় এসেছেন। আছেন সুহৃদেরা। সকাল থেকেই তাঁরা সেখানে অবস্থান করছেন।

আফসানার বড় বোনের স্বামী ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, আবিদ-আফসানার একমাত্র ছেলে তানজিদ সুলতান এখন উত্তরায় তার নানার বাসায় আছে। নানা আবুল কাশেম বয়োবৃদ্ধ। নানি মারা গেছেন। আফসানার ছোট বোন আফরিনা খানম যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশ ফিরেছেন। একমাত্র ছোট ভাই আফজাল হোসেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। তিনি গতকালই দেশে ফিরেছেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে আফসানার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, গতকাল আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজার পর আবিদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। তবে আবিদ বিমানবাহিনীতে ছিলেন। সে কারণে বনানীর সামরিক কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়েছে।