ট্রাইব্যুনাল ও রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কারলাইল

লর্ড কারলাইল। ছবি: বিবিসি
লর্ড কারলাইল। ছবি: বিবিসি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেন ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইল। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের পর এক চিঠিতে তিনি মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

সেই লর্ড কারলাইলকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ বলেছেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাসহ সব মামলায় দেশি আইনজীবীদের সহায়তা করতে ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এই আইনজীবীকে নিয়োগ করার কথা জানান। তিনি জানান, কারলাইল লন্ডনে থেকেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সহযোগিতা করবেন। তবে প্রয়োজন হলে তিনি বাংলাদেশেও আসবেন।

সকালে সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী প্যানেলে কারলাইলকে নিয়োগ করার কথা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানোর পর এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আইনজীবী মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লর্ড কারলাইল এমন কোনো অবস্থান নিয়েছিলেন বলে আমার জানা নেই।’

বিএনপির আরও একজন নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসনের মামলার আইনজীবী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এই আইনজীবীকে মূলত দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে সেভাবে আলোচনা হয়নি। ওই নেতা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সঙ্গে খালেদা জিয়ার মামলার সম্পর্ক নেই। যতটুকু শুনেছি, বিএনপি মামলার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে চায়। সেদিক দিয়ে লর্ড কারলাইলের একটা প্রভাব ও পরিচিতি আছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘লর্ড কারলাইল আইসিটি নিয়ে বিদ্বেষমূলক অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি এ সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন, তা একটি স্বাধীন দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি হস্তক্ষেপের শামিল।’

২০১৬ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ও যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখার পর লর্ড কারলাইল বাংলাদেশ সরকার বরাবর একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিটি তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসে পৌঁছে দেন। ওই চিঠিতে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং ওই আদালতের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার সুপারিশ করেন। তিনি লেখেন, ‘মামলাটি অসাঞ্জস্যতায় পরিপূর্ণ, একপেশে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপপূর্ণ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো মান না মেনেই প্রতিষ্ঠিত।’

কারলাইলকে উদ্ধৃত করে সৌদি গেজেট পত্রিকায় আলী আল ঘামাদির একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। এটি জামায়াতে ইসলামীর ওয়েবসাইটে এখনো রয়েছে। ওই নিবন্ধে কারলাইলের মানবতাবিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে তাঁর বিরোধিতার তথ্য উঠে এসেছে।

কারলাইল বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীর বিচার দেখতে এখানে আসতে চেয়েছিলেন। আলী আল ঘামাদির নিবন্ধে তাঁর আসার ইচ্ছের কথা বলা আছে। যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটি বিভাজিত, এর ব্যবস্থাপনা নিম্নমানের। এটি বাংলাদেশের মধ্যে মেরুকরণ সৃষ্টি করবে। রাজনৈতিক বিতর্ক আরও বিষময় করে তুলবে।’

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারলাইল লর্ড সভার সদস্য। এর পাশাপাশি আইন ব্যবসায়ী। সেই হিসেবে তিনি আইনি পরামর্শ দিতেই পারেন। তবে লর্ড সভার সদস্য হিসেবে একে ব্যবহার করে তিনি মানবতাবিরোধীদের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন, সেটা লজ্জাজনক।’