কুয়াকাটার ১১০০ একর বন বিলীন

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় এভাবে উপড়ে পড়ছে কুয়াকাটা সৈকতের সংরক্ষিত বনের গাছ। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায়।  ছবি: প্রথম আলো
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় এভাবে উপড়ে পড়ছে কুয়াকাটা সৈকতের সংরক্ষিত বনের গাছ। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায়। ছবি: প্রথম আলো
>
  • বিশ্ব বন দিবস আজ।
  • ১১ বছরে ১ হাজার ১০০ একর বনভূমি সাগরে বিলীন।
  • এখন আছে ১ হাজার ৩০ একর বন।
  • সৈকতে ভাঙন প্রতিরোধের উদ্যোগের সঙ্গে নতুন বনায়ন করতে হবে।
  • জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধী ও লবণসহিষ্ণু গাছ লাগাতে হবে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটার সৈকতঘেঁষা সংরক্ষিত বনাঞ্চল দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় মূল থেকে বালু সরে বাগানের গাছ উপড়ে পড়ছে। সৈকতে ভাঙনের কারণে বিলীন হচ্ছে বনের গাছ।

বন ও পরিবেশবিদেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবং সমুদ্রের তলদেশে পলি জমায় পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির স্তর উঁচু হওয়ার সঙ্গে বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রকৃতি। ফলে সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। এ কারণে গত ১১ বছরে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যানসহ সংরক্ষিত বনের অর্ধেকেরও বেশি ১ হাজার ১০০ একর বনভূমি সাগরে বিলীন হয়েছে। এখন আছে ১ হাজার ৩০ একর বন।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন এ কে এম আবদুল আহাদ বিশ্বাস বলেন, এ অবস্থায় সৈকতে ভাঙন প্রতিরোধের উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন করে বনায়ন করতে হবে। এ জন্য জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধী ও লবণসহিষ্ণু গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজন উপকূলীয় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা। তাহলে অপরূপ সৌন্দর্যের বেলাভূমি কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্যের পাশাপাশি রক্ষা পাবে বনাঞ্চল।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। এখানে রয়েছে একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার পৃথিবীর একমাত্র সৈকত।

সম্প্রতি সৈকত ঘুরে দেখা যায়, সাগরের ঢেউয়ের ঝাপটায় সৈকতের গাছের মূল থেকে বালু সরে শিকড় বেরিয়ে রয়েছে। কোনো রকম দাঁড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু গাছ। সৈকতে বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের মূল। জোয়ারের স্রোতে ঢেউয়ের আঘাতে বালুতে লুটিয়ে পড়ছে বড় বড় গাছ। সৈকতে পড়ে থাকা গাছগুলো উপকূলের লোকজন কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আর নিচের অংশ সৈকতেই পড়ে রয়েছে।

বেসরকারি কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ বলেন, সৈকতে ভাঙন ও ঢেউয়ের আঘাতে তাল ও নারকেল বাগান বিলীন হয়েছে। ম্যানগ্রোভ বনও বিলীনের পথে।

উপকূলীয় বন বিভাগের পটুয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটায় বনের আয়তন ২ হাজার ১৬৫ দশমিক ৮০ একর। ২০০৫ সালে সরকার একে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। পর্যটকদের কাছ আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে প্রাকৃতিক বনসংলগ্ন এ সৈকত ঘেঁষে ১০ হাজার হেক্টর ভূমির ওপর ঝাউ-বাগান গড়ে তোলা হয়। ২০১০ সাল থেকে এই বনে নতুন বাগান করা হয়। তবে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সামুদ্রিক ঢেউয়ের ঝাপটায় ভাঙনের মুখে পড়ে বনাঞ্চল। প্রতিবছর অন্তত ১০০ একর বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে।

উপকূলীয় বন বিভাগের পটুয়াখালী কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম কুয়াকাটায় বন বিভাগের এলাকায় ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো ট্যুরিজম উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সৈকতে ভাঙন প্রতিরোধে পাউবোকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে পাউবোর কলাপাড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, ভাঙন রক্ষায় একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটির অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে।