বইয়ের সঙ্গে পুড়ল কি মিসকিনার ভবিষ্যৎও?

আগুনে পুড়ে গেছে মিসকিনাদের ঘর। পোড়া বই হাতে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে মিসকিনা। ছবি: প্রথম আলো
আগুনে পুড়ে গেছে মিসকিনাদের ঘর। পোড়া বই হাতে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে মিসকিনা। ছবি: প্রথম আলো

পোড়া বইগুলোর দিকে বিষণ্ন মুখে তাকিয়ে ছিল মিসকিনা। উল্টেপাল্টে দেখছিল কিছু পড়া যায় কি না। মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল, পোড়া বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে কি লেখাপড়ার ইতি টানতে হবে? নুন আনতে পান্তা ফুরায় যে বাবার, তিনি কি পারবেন নতুন বই কিনে দিতে?

মিসকিনার বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের সোনাখুলি ঘোনপাড়া গ্রামে। আজ বুধবার ভোরে ওই গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের গোয়ালঘর থেকে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। ওই আগুনে পুড়ে গেছে মিসকিনাসহ ১৩টি পরিবারের ৪৫টি ঘর। সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হন।

আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িঘরের একাংশ দেখাচ্ছেন ভুক্তভোগী একজন। ছবি: প্রথম আলো
আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িঘরের একাংশ দেখাচ্ছেন ভুক্তভোগী একজন। ছবি: প্রথম আলো

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে সর্বস্ব হারানো মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে। তিনটি গরু, হাঁস-মুরগি পুড়ে মরেছে। এসব গবাদিপশুর জন্য আহাজারি করছিলেন কেউ কেউ। আগুনে কিছু রক্ষা পেয়েছে কি না, পোড়া ঘরে তাই খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন অনেকে। সেখানেই পোড়া বই হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মিসকিনাকে।

মিসকিনার বাবা ক্ষুদ্র কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, ভোর পাঁচটার দিকে ‘বাঁচাও’ ‘বাঁচাও’ চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙে। উঠে দেখেন দাউ দাউ আগুন ঘরবাড়ি গ্রাস করছে। লোকজন দিগ্‌বিদিক ছুটছে। তিনি বাড়ির লোকজন তাড়া দিয়ে বের করে আনেন। ঘুমিয়ে থাকা মিসকিনাকে টেনেহিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন। ঘুম ঘুম চোখেই মিসকিনা দেখল, কীভাবে আগুনে পুড়ে গেল তাদের বাড়িঘর।

আগুনে মোস্তাকিমাদের ঘরও পুড়েছে। ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে পুড়েছে তার বই-খাতাও। ছবি: প্রথম আলো
আগুনে মোস্তাকিমাদের ঘরও পুড়েছে। ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসের সঙ্গে পুড়েছে তার বই-খাতাও। ছবি: প্রথম আলো

মিসকিনা পাশের সোনাখুলি ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী। লেখাপড়ায় বেশ ভালো। কিন্তু বাবার সে রকম সামর্থ্য নেই যে আবার নতুন করে কিনে দেবে বই, খাতা আর জামা-কাপড়। মিসকিনার আশঙ্কা, আর হয়তো মাদ্রাসায় যাওয়া হবে না তার। একই রকম করে ভাবছে প্রতিবেশী দিনমজুর গোলাম মোস্তফার মেয়ে মোস্তাকিমা আক্তারও। সে একই মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। আজ ওদের দুজনের কেউই মাদ্রাসায় যেতে পারেনি।

সৈয়দপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মাহমুদুল হাসান জানান, অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সকালে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বজলুর রশীদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে এক বান ঢেউটিন, নগদ তিন হাজার টাকা ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়।